চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রতিশ্রুতির বিপরীতে বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থা ও দেশগুলোর অর্থ ছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে। গত অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় এটি বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। যদিও ৩৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ জুলাইয়ে বৈদেশিক ঋণের এক টাকাও খরচ করতে পারেনি। এদিকে বৈদেশিক ঋণ ছাড় বাড়লেও কমেছে ঋণ পরিশোধ।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

ইআরডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম মাসে বাংলাদেশের জন্য ৪৮ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঋণ-সহায়তা ছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশগুলো। এর মধ্যে অনুদান হিসেবে এসেছে ৯১ লাখ ২০ হাজার ডলার। আর ৪৭ কোটি ৮৯ লাখ ডলার ছাড় করা হয়েছে ঋণ হিসেবে।

জুলাইয়ে ছাড় হওয়া এই বৈদেশিক ঋণ গত অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় ১৫ কোটি ৯৩ লাখ ডলার বা ৪৮ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই মাসে ছাড় হয়েছিল ৩২ কোটি ৮৬ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরের বারো মাসে রেকর্ড এক হাজার কোটি ডলার বা ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড় হয়েছিল। অবশ্য ওই অঙ্কে মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারী থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য হওয়া বাজেট সহায়তার অর্থও ছিল।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ঋণ ও অনুদান মিলে মোট ৯৩ হাজার কোটি টাকা বা প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রতি মাসে ৮৩ কোটি ডলার করে ছাড় হতে হবে। সে হিসাবে জুলাই মাসে অর্থছাড়ে বেশ পিছিয়ে আছে।

বৈদেশিক ঋণ ছাড়ের বিষয়ে ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, আসলে বৈদেশিক ঋণ ছাড় হয় বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুত প্রকল্পের বাস্তবায়নের বিপরীতে। প্রথম মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের গতি শ্লথ ছিল। তাই বৈদেশিক ঋণও ছাড় হয়েছে কিছুটা কম। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বৃদ্ধি পেলে বৈদেশিক ঋণের ছাড়ও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে, জুলাইয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম মাসে জুলাইতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের হার মাত্র শূন্য দশমিক ৯৬। ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ৩৬টি বিদেশি অর্থ খরচের খাতা খুলতেই পারেনি বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

আইএমইডির সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির এক শতাংশের কম বাস্তবায়ন হয়েছে। আড়াই লাখ কোটি টাকার এডিপির মধ্যে খরচ হয়েছে আড়াই হাজার কোটির টাকার কম। টাকার অঙ্কে এবং বাস্তবায়ন হার, দুই দিক থেকেই প্রথম মাসের এডিপি আগের তিন বছরের চেয়ে কম। ব্যয় হয়েছে মাত্র দুই হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) একই সময় যা ছিল এক দশমিক ১৪ শতাংশ এবং ব্যয় ছিল ২ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাইয়ে খরচ ছিল তিন হাজার ২৫৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বা এক দশমিক ৫২ শতাংশ। এমনকি করোনার ২০১৯-২০ অর্থবছরেরও ব্যয় ছিল তিন হাজার ৯৫০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বা এক দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর এখন স্বাভাবিক সময়েও এক শতাংশ অর্জিত হয়নি। চলতি বছর এডিপির আকার দুই লাখ ৫৬ হাজার তিন কোটি টাকা।

প্রথম মাসের খরচের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিলের এক হাজার ৩২২ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য থেকে ৯৭৬ কোটি টাকা এবং বাস্তবানকারী সংস্থাগুলোর নিজস্ব কোষাগার থেকে খরচ হয়েছে ১৫৭ কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৮৪ কোটি টাকা খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় খরচের খাতাই খুলতে পারেনি। ১৮টি মন্ত্রনালয় জিওবি অর্থে টাকা ব্যয় করতে পারেনি।

ইআরডির প্রতিবেদন অুনযায়ী, গত জুলাই মাসে বাংলাদেশের জন্য এককভাবে সর্বোচ্চ ২০ কোটি ডলার ছাড় করেছে জাপান। চীন ছাড় করেছে ১০ কোটি ২২ লাখ ডলার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ছয় কোটি ৩৭ লাখ ডলার, ভারত পাঁচ কোটি ৮৫ লাখ ডলার এবং বিশ্ব ব্যাংক দুই কোটি ২২ লাখ ডলার ছাড় করেছে।

অন্যদিকে, জুলাই মাসে দাতাদের পুঞ্জিভূত পাওনা থেকে পরিশোধ করা হয়েছে ১৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এক মাসে পরিশোধ করা এই অর্থ গত অর্থবছরের জুলাই মাসের তুলনায় প্রায় ৬০ লাখ ডলার কম। গত অর্থবছরের জুলাই মাসে ১৮ কোটি ৫১ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল।

এ বছর জুলাই মাসে অর্থ ছাড় বেশি হলেও নতুন প্রতিশ্রুতি এসেছে কম। মাত্র ১৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঋণের একটি চুক্তি হয়েছে অর্থবছরের প্রথম মাসে। গত বছরের জুলাই মাসে ৯৫ লাখ ডলারের নতুন প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল।