হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা এখন অনেক ঘটছে। শুধু বয়স্করাই নয় বরং তরুণরাও হার্ট অ্যাটাকে অকালে মৃত্যুবরণ করছে। হার্ট অ্যাটাক তখনই ঘটে যখন হৃদপিণ্ডের পেশির কোনো একটি অংশ পর্যাপ্ত রক্ত পায় না।
এক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের করোনারি ধমনী হঠাৎ ব্লক হয়ে গেলে ধীর রক্ত সরবরাহ হয়। ফলে হার্টে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায় ও হার্ট অ্যাটাক ঘটে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাচ্ছে, ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে নাকি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। বেশ কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে, হঠাৎ ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে আসা বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষ করে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এই অভ্যাস ঠিক নয়।
এতে হার্ট অ্যাটাক বা হার্টের ছন্দের অনিয়ম হতে পারে। হঠাৎ শরীরে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি ফেললে ত্বকের রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়ে যায়।
এতে শরীরের রক্ত প্রবাহ সাময়িক হলেও ধীর হয়ে যায়। ফলে শরীরের চারপাশে রক্ত পাম্প করতে হৃদপিণ্ড দ্রুত কাজ করে ফলে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। এটি রক্তনালির চাপও বাড়িয়ে দিতে পারে। এমনকি সুস্থ, ফিট বা অল্প বয়স্কদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি রক্তনালি সংকোচন (রক্তনালিগুলোর চারপাশে পেশি শক্ত হওয়া) সৃষ্টি করে হার্ট অ্যাটাককে ট্রিগার করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এটি সাধারণত গরম আবহাওয়ায় ঘটে, যখন বেশিরভাগ মানুষ স্বস্তি পেতে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেন।
এই বিষয় সম্পর্কে প্রথম ধারণা পাওয়া যায় ফিজিওলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায়। সেখানে গবেষকরা ব্যাখ্যা করেন, অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিতে গোসল করা বেশ বিপজ্জনক। এটি নিউরোজেনিক কার্ডিও-শ্বাসযন্ত্রের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যাকে ঠান্ডা শক প্রতিক্রিয়া বলা হয়। এই শকের কারণে অস্থিরতা, দম বন্ধ হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট কিংবা আতঙ্কের সৃষ্টি হতে পারে। এতে হৃৎপিণ্ডে অস্বাভাবিক ছন্দের সৃষ্টি হয় ও হার্ট অ্যাটাক ঘটে।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ কী কী?
হার্ট অ্যাটাক হলে বুকের মাঝখানে বা বাম দিকে ব্যথা বা চাপের মতো অস্বস্তি হয়। এটি কয়েক মিনিটের বেশি স্থায়ী হতে পারে, আবার চলেও যেতে পারে কিংবা পুনরায় ব্যথা হতে পারে। এর সঙ্গে হতে পারে শ্বাসকষ্টও।
এর পাশাপাশি অতিরিক্ত ঘাম হওয়াও হৃদরোগের আরেকটি সাধারণ লক্ষণ। এছাড়া আপনি খুব ক্লান্ত বা দুর্বল বোধও করতে পারেন। অনেকে অজ্ঞান হয়েও পড়তে পারেন। বুকে ব্যথা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। বুক ছাড়াও এটি চোয়াল, পিঠ, ঘাড়, বাহু বা কাঁধেও হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে বমি বমি ভাব বা বমি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এগুলোকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা মনে করে অনেকেই ভুল করেন।
গোসলে কীভাবে সাবধান থাকবেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কখনো ঠান্ডা পানি শরীরে হঠাৎ করে ঢালবেন না। প্রথমে স্বাভাবিক পানি ঢালুন তারপর আস্তে আস্তে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। তবে হৃদরোগীদের উচিত ঠান্ডা পানিতে গোসল করা থেকে বিরত থাকা।
যদিও ঠান্ডা পানিতে গোসলের কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও আছে। নেদারল্যান্ডসের ৩ হাজার অংশগ্রহণকারীর উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ঠান্ডা পানিতে গোসল করেন তাদের অসুস্থতার কারণে কাজ থেকে ছুটি নেওয়ার সম্ভাবনা ২৯ শতাংশ কম ছিল অন্যদের তুলনায়।
অন্যান্য গবেষণায় জানা গেছে, ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। এছাড়া শরীরের প্রদাহও কমে। অনেক চিকিৎসকদের মতে, ঠান্ডা পানির ঝরনা দীর্ঘায়ু বাড়ায়। এমনকি বিপাকক্রিয়াও উন্নত করে।