বর্ষাকালে বৃষ্টি উপভোগ করার আনন্দে কমবেশি সবাই মেতে উঠলেও এ সময় বিভিন্ন রোগব্যাধি বেড়ে যায়। বিশেষ করে জ্বর-ঠান্ডা-কাশি কিংবা গলাব্যথার সমস্যা বর্ষায় ছোট-বড় বেশিরভাগ মানুষই ভোগেন। আসলে বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়ার তীব্র পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্ষা তার সাথে কিছু রোগও নিয়ে আসে।
বৃষ্টির ফলে রাস্তার গর্ত ও আশেপাশের এলাকায় জমে থাকা পানি জমে থাকায় তা মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়। ফলে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। বর্ষায় সর্দি, কাশি, ফ্লু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া, ডেঙ্গু বর্ষা মৌসুমের সাধারণ রোগ। এর সঙ্গে তো আবার বেড়ে চলেছে করোনা সংক্রমণ।
তাই এ সময় রোগব্যাধি থেকে বাঁচতে বাড়াতে হবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তবে জীবনধারণে অনিয়ম ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।
বর্ষায় সুস্থ থাকতে চাইলে অবশ্যই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে, আর এজন্য ভরসা রাখতে পারেন ৫ ভেষজে। এগুলো সবাই খুব সহজেই হাতের কাছে পেয়ে যাবেন। জেনে নিন কী কী-
তুলসি পাতা
তুলসি পাতা বিভিন্ন রোগের দাওয়াই হিসেবে কাজ। তুলসিতে থাছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-এজিং ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য। বর্ষায় প্রায়ই সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন অনেকেই, তাদের জন্য এক কাপ গরম তুলসি চা মুহূর্তেই বাড়াতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
ফলে শরীরের ভালো ব্যকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ে ও সেগুলো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। তুলসিতে থাকা উপাদানসমূহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও বিভিন্ন অসুখ থেকে মুক্তি দেয়।
গিলয়
মৌসুমি ফ্লু থেকে বাঁচাতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে গিলয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে এই ভেষজ। এতে থাকে হাইপোগ্লাইসেমিক অ্যাজেন্ট। যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে ও এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করে।
ফলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে। তাই বর্ষার মৌসুমে অবশ্যই গিলয় রাখুন পাতে।
হলুদ
শুধু মসলা হিসেবেই নয় বরং হলুদ বিভিন্ন রোগের দাওয়াই হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। রূপচর্চা থেকে শুরু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে এই প্রাকৃতিক ভেষজ।
এক গ্লাস গরম দুধে সামান্য হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে নিয়মিত পান করলে দ্রুত বাড়বে ইমিউনিটি। চাইলে কাঁচা হলুদ খেতে পারেন।
এমনকি শরীরের বিভিন্ন ক্ষত নিরাময় ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা থেকেও মুক্তি দেয় হলুদ। বর্ষায় ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে হলুদ ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
ত্রিফলা
আয়ুর্বেদে যুগ যুগ ধরে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হিসেবে ত্রিফলা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, হাঁপানি, জ্বর, মাথাব্যথা, ডিসপেপসিয়া ও গলা ব্যথার চিকিৎসার জন্য একটি বিস্ময়কর ওষুধ এটি।
বর্ষাকালে হজমের সমস্যা বেড়ে যায়। আমলার উপস্থিতি শরীরে ভিটামিন সি সরবরাহ করে, যা খারাপ সর্দি সারায়। একই সঙ্গে বর্ষায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্রিফলা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি রক্ত পরিশোধক ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়েও দারুন কার্যকরী।
আদা
গলা ব্যথা থেকে খুসখুসে কাশি এমনকি রান্নার স্বাদ বাড়াতেও নিয়মিত ব্যবহৃত হয় আদা। এর স্বাস্থ্যগুণ সবারই কমবেশি জানা। গলা ব্যথা, সর্দি, কাশি, ফ্লু সহজেই নিরাময় করা যায় আদা দিয়ে।
এটি প্রাকৃতিকভাবে শরীরকে সুস্থ করে তোলে এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। আদা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেটিভ বৈশিষ্ট্যে পরিপূর্ণ। তাই বর্ষাকালে বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত পাতে রাখুন আদা।