ভাটি এলাকায় জমে ওঠা পলির স্তরে বদলে যাচ্ছে ফেনী নদীর স্বাভাবিক গতি। বর্ষায় দফায় দফায় ভাঙনের কবলে পড়েছে সিডিএসপি বাঁধ, বিস্তীর্ণ এলাকা ও শত শত মাছের ঘের। এতে করে কার্যকারিতা হারাচ্ছে মুহুরী সেচ প্রকল্প।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকল্পের ভাটিতে প্রায় ৭০০ বর্গ মিটার এলাকায় পলি জমে ৭৫ ভাগ ভরাট হয়ে গেছে। এতে নদীর পানি প্রবাহের পথ বদলে একদিকে ছোট ছোট চর জেগে উঠছে অন্যদিকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আবার সেচ প্রকল্পের বেশ কিছু স্লুইচ গেট ইতোমধ্যে পলি জমে কার্যকারিতা হারিয়েছে।

মিরসরাইয়ের ওচমানপুর ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল মোস্তফা জানান, ২০১৯ সালের শুকনো মৌসুমে প্রকল্পের ভাটির মুখে বালি ও মাটি জমাট শুরু হয়। ওই বছর বর্ষা শুরু হলে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর থেকে প্রতি বছর নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের। যা গত ৩৫ বছরেও এখানকার মানুষ দেখেনি।

এদিকে প্রতি বছর শুকনো মৌসুমে মুহুরী সেচ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফেনীর সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার ২৭ দশমিক ১২৫ হেক্টর জমি ইরি চাষের আওতায় আসে। আশঙ্কা করা হচ্ছে নদীতে পলি জমা এলাকা জরুরি ভিত্তিতে ড্রেজিং করা না হলে এখানকার জমিগুলো অনাবাদী পড়ে থাকবে।

আজমপুর গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, আমরা নদীর আচরণ বুঝি। জমে থাকা বালুমাটি খনন করলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। গত ৩৫ বছর এখানে আমরা ভাঙন দেখিনি। এখন বালু জমার কারণে ভাঙন হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিরসরাইয়ের বিস্তীর্ণ জনপদকে ভাঙন থেকে রক্ষা করতে ১৯৯৪ সালে চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রকল্পের (সিডিএসপি) আওতায় ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধের কারণে বাঁশখালী ও ইছাখালী এলাকায় গড়ে ওঠে হাজার হাজার একর মৎস্য ঘের। যা থেকে চট্টগ্রামের মৎস্য খাদ্য চাহিদার ৭০ ভাগ উৎপাদিত হয়।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক বছর আগে সিডিএসপি বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে সাগরে বিলীন হয়ে যায়। ওই সময় ভেঙে যাওয়া অংশ নদীর গতি প্রকৃতি বুঝে অন্য দিক দিয়ে ঘুরিয়ে নতুন করে নির্মাণ করা হয়। জরুরি ভিত্তিতে সিডিএসপি বাঁধের পশ্চিম পাশে সুরক্ষা ব্লক না বসালে চলতি বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিবে।

স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এক সময় নদী ও সাগর থেকে বাঁধের দূরত্ব ছিল অন্তত ৭০০ মিটার। বর্তমানে কোথাও ১০ মিটার আবার কোথাও ৫০ মিটার দূরত্বে রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে গুরুত্বপূর্ণ এ বাঁধ ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়বে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিসি ব্লক বসালেও সেটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে মিরসরাইয় উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। সেখানে ভয়ংকর অবস্থা। যে কোনো সময় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফেনীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নুরুন নবী জানান, ভাটি এলাকায় জমে থাকা পলি ড্রেজিংয়ের জন্যে উদ্যোগ নিয়েছি। এ বিষয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটিও হয়েছে। প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে অর্থ চেয়ে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছি। টাকা পেলেই সক্ষমতা যাচাই শেষে মূল প্রকল্প সাবমিট করা হবে।

এর আগে ফেনী, মুহুরী ও কালিদাস নদীর সম্মিলিত পানি প্রবাহকে সেচ কাজে লাগাতে ১৯৮৫-৮৬ অর্থ বছরে নির্মিত হয়ে মুহুরী সেচ প্রকল্প। ৪০টি স্লুইচগেট বিশিষ্ট এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ১৬৮ কোটি টাকা। যার অর্থায়ন করে সিডা, ইইসি ও বিশ্বব্যাংক।