যত্নআত্তি যেভাবে

কোনো প্রাণীকে পালতে চাইলে নিকটস্থ প্রাণী চিকিৎসাকেন্দ্রে কথা বলে প্রাণী চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া ভালো। মাছ, পাখি, কচ্ছপ, কুকুর, বিড়াল—প্রতিটি প্রাণীর যত্নের নিয়ম ভিন্ন। বিড়াল, কুকুর ও খরগোশের যত্নআত্তি প্রসঙ্গে নিজের বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে বললেন প লাইফ কেয়ারের (মিরপুর শাখা) প্রাণী চিকিৎসা কর্মকর্তা ফাতিহা ইমনূর।

  • বিড়াল ও কুকুর মূলত আমিষজাতীয় খাবার খায়। অন্য কিছু না দিলেও চলে। মাছ, মাংস এবং খানিকটা ডিম দিতে পারেন। সামান্য সবজি সেদ্ধ করে (মিষ্টিকুমড়া, আলু, গাজর, পেঁপে) এগুলোর সঙ্গে মিশিয়েও দিতে পারেন। দিতে পারেন সামান্য ভাতও। কিছু বিদেশি কুকুরকে বাড়তি ক্যালসিয়াম দিতে হয়। খরগোশকে পালংশাক, ধনেপাতা, লেটুসপাতা, টমেটো, শসা, গাজর, কাঁচা ঘাস, শুকনা খড় দিতে পারেন। বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর বিভিন্ন খাবার কিনতেও পাওয়া যায়। রাজধানীতে অনেকগুলো এলাকায় পেট শপ গড়ে উঠেছে। সেখানে গেলেও খাবার কিনতে পাবেন।

  • প্রাণীর পানির পাত্রের পানি বদলে দিন নিয়মিত। ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঢেলে রাখা পানি দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায়, পানিতে ধুলা–ময়লাও পড়তে পারে যেকোনো সময়। খাবার ও পানি রাখার জন্য ভালো মানের পাত্র বেছে নিন। ময়লা পড়লে পানি বদলে দিন। পোষ্য খাবে ভেবে অপরিচ্ছন্নভাবে খাবার দিলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
  • ছোটবেলা থেকে মায়ের দুধ ছাড়া অন্য দুধে অভ্যস্ত না হয়ে থাকলে প্রাণীদের বাইরের দুধ দেবেন না। এতে পেটের পীড়া হতে পারে। চকলেট, চা-কফি, পেঁয়াজ বিড়াল-কুকুরের জন্য ক্ষতিকর। বিড়াল-কুকুরের খাবারে লবণ দিলে সেটিও হবে খুব সামান্য। মসলা ছাড়াই রান্না করুন বিড়াল-কুকুরের খাবার। খরগোশকে কলমি শাক এবং ভাত দেবেন না।
  • বিড়াল-কুকুরকে গোসল করান সপ্তাহে একবার। ওদের জন্য বিশেষ শ্যাম্পু কিনতে পাওয়া যায়, সেটি ব্যবহার করুন। শীতের সময় মাসখানেকের ব্যবধানে গোসল করালেও ক্ষতি নেই।
  • পোষ্যকে সময় দিন, ওদের সঙ্গে খেলুন। তাহলে সে দ্রুত আপনার অনুগত হয়ে যাবে।

  • বিড়ালের জন্য নখ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বিড়ালের নখ না কাটাই ভালো। তবে বাসার অন্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে বিড়ালের নখ কেটে থাকেন। কাটতে হলেও কাটুন কেবল নখের অগ্রভাগ (সামান্য অংশ)। কুকুর আর খরগোশের নখের সামান্য অংশ কেটে দেওয়া যেতে পারে। প্রাণীর নখ কাটতে প্রয়োজনে পেশাদার ব্যক্তির সহায়তা নিতে পারেন। লম্বা লোমের জন্য গরমে প্রাণীটি কষ্ট পেলে (বিদেশি প্রাণীর ক্ষেত্রে) পেশাদার হাতে লোমও ছাঁটিয়ে নিতে পারেন। প্রাণী চিকিৎসকের সহকারীরা অনেক ক্ষেত্রেই দক্ষতার সঙ্গে এই কাজগুলো করে থাকেন । রাজধানীর বনানীতে পেট পারলার আছে। সেখানে গেলেও প্রাণীর নানা ধরনের সেবা নিতে পারবেন।

  • দুই মাস বয়সেই বিড়াল ও কুকুরকে জীবাণুর সংক্রমণরোধী টিকা দিন। এক মাস পর বুস্টার ডোজ দিয়ে নেওয়া ভালো। এ ছাড়া তিন মাস পূর্ণ হলে অবশ্যই দিন জলাতঙ্কের টিকা। এরপর প্রতিবছর নিয়ম করে টিকাগুলো দিন।
  • তিন মাস অন্তর বিড়াল-কুকুরকে কৃমির ওষুধ দিন, খরগোশকে দিন ছয় মাস অন্তর।

চিকিৎসাসেবা

আমরা যেমন অসুস্থ হই, অসুস্থ হয় পোষ্যরাও। ওদেরও প্রয়োজন চিকিৎসা এবং আন্তরিক সেবা। ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে রয়েছে টিচিং ও ট্রেনিং পেট হাসপাতাল ও গবেষণাকেন্দ্র। মাইক্রোস্কপিক পরীক্ষা এবং রক্ত পরীক্ষা তো বটেই, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রামের মতো পরীক্ষা করানোর সুবিধাও সেখানে রয়েছে। ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, গুলশান-বাড্ডা সংযোগ সড়ক ও মিরপুর এলাকায় রয়েছে প্রাণীদের ক্লিনিক। এর মধ্যে লালমাটিয়া ও মিরপুরে রয়েছে প লাইফ কেয়ার ক্লিনিকের শাখা, যেখানে তুলনামূলক কম খরচে সেবা পাওয়া যায়। সীমিত আয়ের মানুষের আদরের প্রাণীর সেবাও সেখানে মেলে। সামর্থ্যবান ব্যক্তিরাও সেখানে সেবা নিয়ে থাকেন, খরচের একটা অংশ ব্যয় করা হয় অসহায় প্রাণীদের আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য।