আগামীকাল (সোমবার) থেকে পদ্মা সেতুতে নেমে ছবি তুললে জরিমানার কবলে পড়তে হবে। একই সঙ্গে বাইকের গতি কিংবা নিয়ম না মানলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

রোববার (২৬ জুন) দুপুর ২টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য জানান শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবিবা ফারজানা।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাজিরা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবিবা ফারজানা

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নির্বাহী ক্ষমতা বলে জাজিরা প্রান্তে পরিদর্শন করতে আসলাম। সাধারণ মানুষ সেতুতে উঠে ছবি, সেলফি তুললে কিংবা পদ্মা সেতুর ওপরে বসলেই জরিমানা করা হবে। আমরা প্রথম দিনেই দেখছি সাধারণ মানুষ সেতু পার হতে গিয়ে ছবি তুলছেন। আজ প্রথম দিন শিথিল থাকলেও কাল (সোমবার) থেকেই কঠোর ব্যবস্থা নেবো আমরা।

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে উম্মে হাবিবা ফারজানা বলেন, যেসব বাইকচালক নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে বাইক চালাবেন, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাড়ি থেকে নেমে পদ্মা সেতুর ওপর দলগত ছবি তুলছেন

এদিকে, রোববার সকাল থেকে দেখা যায় পদ্মা সেতু পার হতে যাওয়া লোকজন নিজেদের বাইক কিংবা গাড়ি থেকে নেমে সেতুর ওপরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। অনেকে টিকটক কিংবা ভিডিও করে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করছেন। এমন পরিস্থিতি দেখে প্রশাসন জরিমানার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা যায়।

এদিকে, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর প্রথম দিনেই বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল থামিয়ে মোবাইল ক্যামেরায় সেলফি তোলার হিড়িক পড়েছে।

যদিও পদ্মা সেতুর ওপর যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে ছবি তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তবুও উৎসুক জনতাকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ছবি তুলতে দেখা যায়।

সেতু কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পদ্মা সেতুর ওপর অনুমোদিত গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা, পদ্মা সেতুর ওপর যেকোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা বা হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ।

রোববার পদ্মা সেতুর মাঝামাঝিতে সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা সেতু দেখতে আসা বেশিরভাগ মানুষ গাড়ি থামিয়ে একক ও দলগত ছবি তুলছেন। কয়েকটি বাস থামিয়েও যাত্রীদের নেমে ছবি তুলতে দেখা যায়।

এর আগে শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর ১২টা ৬ মিনিটে সেতু দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর জাজিরার অভিমুখে রওনা করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বাংলাবাজার ঘাটের জনসভাস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন।

২০০১ সালের ৪ জুলাই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এ সেতুর ওপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে।

পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮ দশমিক ১০ মিটার। পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি।

বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। এক শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্বপ্নের কাঠামো নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।