টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলা সদর, যাদুরচর, শৌলমারী, দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ৪৯ গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ১০৭ হেক্টর জমির ধান, পাট ও শাকসবজি।

এছাড়া রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা ও ভেলা। রৌমারী উপজেলার ২১টি বিদ্যালয়ে পানি ওঠায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান।

কাশিয়াবাড়ি গ্রামের কৃষক আকবর আলী বলেন, এবার আড়াই বিঘা জমিতে ধান চাষ করা হয়। এর মধ্যে দেড় বিঘা জমির ধান কাটতে পারলেও ভারত থেকে হঠাৎ পাহাড়ি ঢল এসে এক বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। এতে ২১ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয়ে ও বাড়ির চারপাশে পানি উঠায় নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছে না তারা। এতে পড়াশুনার খুব ক্ষতি হচ্ছে।

পুরাতন যাদুরচর এলাকার কৃষক হাজী আব্দুস সামাদ বলেন, হঠাৎ পাহাড়ি ঢল নামায় এলাকার সব রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এখন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নাই। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না।

লালকুড়া গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ বলেন, ‘হঠাৎ বন্যার পানি আইসা জমিতে রাখা সব খড় ভাসাইয়া নিয়া গেছে। এখন গরুরে খাওয়ামো কী, এ চিন্তায় আছি।’

যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, বন্যার পানিতে ইউনিয়নের ২০০ বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। এছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১২ গ্রামের ১৭ হাজার মানুষ। ভেলা আর নৌকায় পারপার হতে হচ্ছে তাদের। শনিবার ইউএনওকে সরেজমিন বন্যাকবলিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখানো হয়েছে এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দ্রুত ত্রাণ সহায়তার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

দাঁতভাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক বলেন, এ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে করে এসব গ্রামের ইরিধান ও পাট ক্ষেতসহ অসংখ্য মৌসুমি ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, বন্যার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে। বরাদ্দ পেলে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাউয়ুম চৌধুরী  বলেন, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ১০৭ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে আউশ ধান ৪৮ হেক্টর, পাট ৪২, শাকসবজি ১২ ও ৫ হেক্টর তিল তলিয়ে গেছে। পাহাড়ি এ পানি পাঁচ দিন স্থায়ী হলে ক্ষেতের সব ফসল নষ্ট হয়ে।

রৌমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ২১টি বিদ্যালয় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ১৩টি বিদ্যালয় যাদুরচর ইউনিয়নের। পানিবন্দি এলাকার শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে না এলেও কোনো সমস্যা নেই।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশারাফুল আলম রাসেল  বলেন, সরেজমিন বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। বন্যার্ত পরিবারগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। আপাতত ফান্ডে যা আছে তা থেকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো মেরামতে কাজ চলছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আরও চাহিদার আবেদন দেওয়া হয়েছে।