সড়ক কাটাকাটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরে। এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, সড়কের কাজ সবেমাত্র সমাপ্ত হয়েছে এরই মধ্যে ঢাকা ওয়াসা, ডেসকো বা অন্য কোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সড়ক কাটা বা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। যদিও সেবার গতি আনতে এসব কাজ করা চলে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের সড়ক কাটা বা খোঁড়াখুঁড়ি জনজীবনে নিয়ে আসে ভোগান্তি।

এমনই সড়ক কাটার জন্য ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) একটি প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট পূর্ত কাজ সমন্বয় খাতে ১০০ কোটি ৮২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পে এই বরাদ্দের আবদার করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুসারে, শত কোটি টাকার মধ্যে ৫০ কোটি টাকা সরকার দেবে, বাকি অর্থ ডিপিডিসি নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করবে। প্রকল্পে অন্যান্য মনিহারি খাতে পাঁচ লাখ এবং ‘হায়ারিং চার্জ’ খাতে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ডিপিডিসি থেকে জানা যায়, প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন পায়। পুরো প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় এক হাজার ৯৫৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন এক হাজার ৮৯৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, বাকি অর্থ ডিপিডিসি মেটাবে।

প্রাথমিক অনুমোদন অনুসারে প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত ছিল। বর্তমান বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে জুন ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের প্রথম সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প শক্তি বিভাগে। পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) একেএম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে সম্প্রতি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সড়ক কাটার বিষয়ে এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ডিপিডিসির প্রস্তাব বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করেছি। সামনে এটা নিয়ে আরও আলোচনা হবে। এখনই এ বিষয়ে কিছু মন্তব্য করা যাচ্ছে না।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পের কার্যপরিধিতে প্রস্তাবিত পরিবর্তনসমূহের ফলে প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন যেন বাধাগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। প্রকল্পের ক্রয় পরিকল্পনার বিভিন্ন প্যাকেজের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন করার বিষয়ে সভায় বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়। এছাড়া সম্পাদিত চুক্তিসমূহের প্রযোজ্য অংশের কপি এবং প্রকল্পের বিভিন্ন খাতের ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি আরডিপিপিতে সংযুক্ত করার বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়।

প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন অঙ্গের প্রাক্কলিত ব্যয় পর্যালোচনায় কতিপয় অঙ্গে ব্যয় অত্যধিক বিধায় এসব অঙ্গের যেমন- উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, মোবাইল ভাতা, মোটরযান, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ প্রাক্কলিত ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করার সুপারিশ করেছে কমিশন। এছাড়া প্রস্তাবিত আরডিপিপিতে নতুন সংযোজিত খাতে ‘অন্যান্য মনিহারি’এবং ‘হায়ারিং চার্জ’র যৌক্তিকতা সম্পর্কে সভায় আলোচনা হয় এবং এ দুটি খাতে প্রাক্কলিত ব্যয় হ্রাস করে ‘অন্যান্য মনিহারি’পাঁচ লাখ এবং ‘হায়ারিং চার্জ’ বাবদ ২৪ লাখ টাকা নির্ধারণের বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয়।

রোড কাটিংয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট পূর্ত কাজ সমন্বয় খাতে অতিরিক্ত ১০০ কোটি ৮২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। রোড কাটিং বাবদ সিংহভাগ অর্থ জিওবি খাত থেকে অর্থায়নের প্রস্তাবের কারণ জানতে চাওয়া হলে প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মাদ শাহেদ মাহবুব ভূঞা জানান, সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে রোড কাটিংয়ের ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এই খাতে ব্যয় বেড়েছে।

ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ শাহেদ মাহবুব পরিকল্পনা কমিশনে জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় প্রয়োজনের নিরিখে পরিকল্পনা কমিশনের পূর্বানুমতি গ্রহণ সাপেক্ষে প্রকল্পের কার্যপরিধিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পরিবর্তনসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

শিল্প ও শক্তি বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. নজিব প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির কারণ ও যৌক্তিকতা জানতে চাইলে বলেন, প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়নে অধিক সময় ব্যয়, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে মন্ত্রণালয় হতে ভেটিং প্রাপ্তিতে অধিক সময় ব্যয় হওয়ায় মেয়াদ বাড়ছে। প্রকল্পের প্যাকেজ-০১ ও প্যাকেজ-০২ এর চুক্তি স্বাক্ষর করতে বিলম্ব হয়। এছাড়া প্রয়োজনীয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ না পাওয়ায় মালামাল সরবরাহ হ্রাস পায়। প্রকল্পের আওতায় মালামালসমূহের মধ্যে অধিকাংশ মালামাল চীন থেকে আমদানি করা হবে। যেমন- কন্ডাক্টর ২৫০ কেডিএ, ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার, স্টিল পুল ইত্যাদি। চীন সরকারের গৃহীত পাওয়ার কাট পলিসির কারণে সরবরাহকৃত মালামাল উৎপাদন এবং শিডিউল অনুযায়ী সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিক সময়ের প্রয়োজন , ফলে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে প্রকল্পের কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। প্রকল্পটি যথা সময়ে সম্পন্ন করা, প্রকল্প সমাপ্তির পর প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত ভৌত সুবিধাদির রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা টেকসই করার পরিকল্পনা আরডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়।

এ প্রসঙ্গে আইএমইডির উপ-পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রকল্পটি যথাসময়ে সম্পন্ন করার জন্য একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা আবশ্যক। এ বিষয়ে উপস্থিত সবাই একমত পোষণ করেন। এছাড়াও সব নির্মাণধর্মী কাজের নকশা প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে প্রণয়ন করার বিষয়ে সভায় সুপারিশ করা হয়।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পের কর্মপরিধিতে প্রস্তাবিত পরিবর্তনের ফলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন যেন বাধাগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্প এলাকা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখপূর্বক আরডিপিপিতে প্রকল্প এলাকার ম্যাপ সংযুক্ত করতে হবে। ক্রয় পরিকল্পনার বিভিন্ন প্যাকেজ সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

এছাড়াও সম্পাদিত চুক্তিসমূহের প্রযোজ্য অংশের কপি পুনর্গঠিত আরডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। ক্রয় পরিকল্পনার বিভিন্ন প্যাকেজের বর্ণনা, একক এবং পরিমাণ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে হবে ।

ডিপিডিসি জানায়, বৈদ্যুতিক লাইন ও তার (বৈদ্যুতিক নির্মাণ/স্থাপন কাজ) খাতের আওতায় নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ এবং লাইন রিনোভেশনের জন্য ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি আরডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। প্রকল্পের আওতায় ১১ কেভি ও ৩৩ কেভি ভূ-গর্ভস্থ ক্যাবল স্থাপনের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বিসিক ইত্যাদি সংস্থার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় প্রাক্কলন এবং ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের রেট শিডিউল ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে।