চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় নাশকতার সন্দেহ করছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

মঙ্গলবার (৭ জুন) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

সব নিয়ম-কানুন মেনেই ডিপোটি পরিচালিত হচ্ছিল। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বিস্ফোরক দ্রব্য নয় বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‌‘এখানে বলা হচ্ছে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, এটা কোন বিস্ফোরক আইটেম নয়। এটি অনুমোদিত রপ্তানি পণ্য, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রপ্তানি করছে। এই ডিপো আইএসপিএস কোড (আন্তর্জাতিক জাহাজ, বন্দর সুবিধাদি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোড) অনুসরণ করেছে। যে কমপ্ল্যায়েন্সগুলো ছিল সবগুলো মেনেছে। সেখানে অগ্নিনির্বাপক যে ব্যবস্থা থাকা দরকার, সবই ছিল। তারপরও ঘটনাটা ঘটে গেল।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিপদজনক পণ্য পরিবহনের যে নীতিমালা আছে, সেটাও সেখানে মানা হয়েছে। বলা হয়েছে, কনটেইনার ডিপোগুলোর মধ্যে বিএম কনটেইনার ডিপোর ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে ভালো।’

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা গতকালকে পরিদর্শন করে যা দেখলাম, আগুনের যে চিত্রটা, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের যে কনটেইনারগুলো ছিল, কিছু কনটেইনারে আগুন ধরে গেছে, বিস্ফোরিত হয়েছে। মাঝখানে কিছু কনটেইনারে কিন্তু হয়নি, কিছুদূর পরে গিয়ে আবার কিছু কনটেইনারে (বিস্ফোরণ) হয়েছে। এটা খুব সন্দেহজনক। কীভাবে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, বিস্ফোরণ হয়ে গেল, অস্বাভাবিক আগুনটা। একটা স্তর বাদ দিয়ে আরেকটা স্তরে আগুনটা ধরেছে। এটা একটা সন্দেহ হচ্ছে। মালিক পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটা নাশকতা কি না?’

‘এটা কোন বিস্ফোরক দ্রব্য নয়। এখানে অন্য একটি- এ ধরনের ইয়ে দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, এমন একটি ইয়ে। যেহেতু এটা বিস্ফোরক নয় তাই তাদের এটা ডিক্লেয়ার করার কিছু নেই।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাপারটা এ রকমই। আমরা যাওয়ার আগে এক ধরনের চিন্তা করেছিলাম। যাওয়ার পরে আমরা আরেক ধরনের ব্যবস্থা দেখলাম।’

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বিস্ফোরক না হলে সেখানে বিস্ফোরণটা কেন ঘটলো- এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অক্সিজেন নিজে জ্বলে না কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সহায়তা করে, এই ধরনের কোন একটা ঘটনা হয়তো ঘটেছে। সেজন্য এখানে বলা হচ্ছে এটা নাশকতা কি না। এই মুহূর্তে এটা বলা খুব কঠিন, তদন্তের আগে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি স্বাভাবিকভাবে বলি-দেখেন গতকালকে একটা ব্যাপক গুজব ছড়ানো হয়েছে। আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। এই উদ্বোধনের সঙ্গে এই ঘটনাটা জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনের যে আয়োজন এতে যে অর্থটা খরচ হবে সেটা ন্যূনতম। (উদ্বোধন অনুষ্ঠান না করে) এই অর্থ দিয়ে আগুন মোকাবিলায় হেলিকপ্টার কেনা হবে গুজব ছড়ানো হয়েছে। মিলিয়ন ডলার এখানে (হেলিকপ্টার কেনা) ব্যয়, সেটা সঙ্গে এটা (সেতু উদ্বোধন ব্যয়) খুবই যৎসামান্য। এটা পপুলার একটি গুজব।’

‘এই যে মিলিয়ে দাওয়া হল, পাশাপাশি নাশকতার ধারণা করা হচ্ছে। এটাতে খুবই যোগসূত্র পাওয়া যায়।’

এর মানে কি আপনারা নাশকতার ধারণা করছেন- এ বিষয়ে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘আমি যেটা দেখেছি, আপনি যদি প্র্যাকটিক্যালি যান আপনারও এমনটা হতে পারে।’

‘সবকিছু তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। যেহেতু আমাদের আশঙ্কাটা এখানে এসেছে। যারা তদন্ত করছেন তারা হয়তো এই বিষয়টাও আমলে নেবেন।’

নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে সেই এগিয়ে যাওয়ায় অনেকে ঈর্ষান্বিত। সেই জায়গাগুলোতে অনেকে যুক্ত হচ্ছে কি না, সেটাও একটা ব্যাপার।’

যেহেতু সেখানে ক্ষতিকর কিছু ছিল না। তাহলে মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সুযোগ নেই- এ বিষয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘তদন্তের মধ্যে বেরিয়ে আসবে, যদি মালিকপক্ষ তদন্তের মধ্যে আসে, গাফিলতি আছে, ডেফেনেটলি আইনের আওতায় আসবে। এতে কোন সন্দেহ নেই।’

ডিপোর মালিক সেখানকার আওয়ামী লীগের একজন নেতা। অনেকেই বলছেন তাকে ছাড় দেয়ার একটা ব্যবস্থা হতে পারে। আপনি কি বলবেন- প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে রাজনীতির সঙ্গে তো কোন সম্পর্ক নেই। সেখানে তো দেখলাম জামায়াতের আমিরও গেছেন।’

ডিপো একটি সেনসিটিভ জায়গা। নাশকতা হলে ডিপোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েওতো প্রশ্ন উঠে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমেরিকার মতো শতভাগ সিকিউরড জায়গায় টুইনটাওয়ারে কিন্তু হামলা করা হয়েছিল। ইংল্যান্ডে বাসা থেকে বের হলে ৩০-৪০টা ক্যামেরার মধ্যে আপনি চলে যাবেন। সেখানেও হামলা হয়েছে। নাশকতা যারা করে, তারাতো সেভাবেই করে। আমার ফোন দুইবার হ্যাক হয়ে গেছে, শুধু বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্যাম্পেইনিং করার জন্য। তো এটা কি নাশকতা না? এটাওতো নাশকতা। কীভাবে হয়েছে আমিও তো জানি না। দেখা যাচ্ছে, আমার আইডি হ্যাকিং করে পাকিস্তানি এক লোকের নামে চালানো হচ্ছে, একজন হিন্দু মহিলার নাম দিয়ে। আমার এটি উদ্ধার করতে প্রায় ২০-৩০ দিন লেগেছে। এটাতো বেশিদিন আগের ঘটনা নয়, ২০১৯ সালের ঘটনা। কাজেই নাশকতা করবে, যারা বেড গেইম প্লে করে তারা আরও বেশি স্কিলড। তারা আরও বেশি মেধাবী।’