মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শেষ সময়ে এসে দিনাজপুরে লিচুর আমদানি, চাহিদা ও দাম—সবকিছুই বেড়ে গেছে। এবার বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে রসালো ও সুস্বাদু এ ফলটি। ক্রেতা, বিক্রেতা ও পাইকারদের আনাগোনায়  মুখরিত হয়ে উঠেছে গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের অস্থায়ী লিচু বাজার। দামে ক্রেতা বেজার হলেও বাগানমালিক, পাইকার এবং ব্যবসায়ীরা বেশ খুশি।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দিনাজপুরে এবার লিচুর চাষ বাড়লেও গতবারের চেয়ে উৎপাদন কম হয়েছে। পাঁচ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে চাষ হওয়া লিচুবাগান থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন।

দিনাজপুরে গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের লিচুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বেদানা, চায়না থ্রি ও বোম্বাই জাতের লিচু বিক্রি হচ্ছে। আমদানিও বেশ ভালো। তবে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবার দামও বেশ চড়া। খুচরা বাজারে ১০০ মাদ্রাজি লিচু বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকা, বোম্বাই জাতের লিচু ৩০০ টাকা ও বেদানা লিচু ১১০০-১৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর চায়না থ্রি বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারই সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে দিনাজপুরের লিচু। গত পাঁচ বছরের হিসাবে যা দ্বিগুণেরও বেশি।

দিনাজপুর ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজিউর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘বাগানেই এবার লিচুর দাম বেশি। বাগানমালিক ও আগাম বাগান কেনা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। সামান্য লাভে আমরা লিচু বিক্রি করছি।’

গোর-এ শহীদ বড় মাঠের ফল ব্যবসায়ী আরিফুল জানান, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা লিচু কিনতে এখানে ছুটে আসছেন। বর্তমানে দিনাজপুর জেলা ছাড়া কোথাও কোনো বাগানে লিচু নেই। তাই সারা দেশের পাইকাররা দিনাজপুরের লিচুর বাজারে নজর দিয়েছেন। তাই লিচুর দাম বেড়ে গেছে।’

লিচু ব্যবসায়ী মেহেরুল ইসলাম আঙ্গুর বলেন, এবার ফল কম, কিন্তু ক্রেতা বেশি। তাই লিচুর দামও বেশি। প্রতি ১০০ চায়না থ্রি লিচু ১৮০০-২০০০ টাকা, বেদানা ১১০০-১৪০০ এবং বোম্বাই লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের লিচুর বাজারে লিচু কিনতে এসেছিলেন আবু বকর সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘এই বাজারে প্রথম পছন্দের তালিকায় ছিল বেদানা লিচু। কিন্তু বেদানা লিচুর দাম অনেক বেশি। এক হাজার বেদানা লিচুর দাম ১২ হাজার টাকা; যা আমার এক মাসের বেতনের সমান। তাই বেদানা লিচু কিনতে পারিনি। বোম্বাই জাতের ২০০ লিচু কিনে বাড়ি ফিরছি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনজুরুল হক বলেন, সারাদেশে কমবেশি লিচু উৎপাদিত হলেও দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা বেশি। এবার ভালো দাম পেয়ে চাষি, পাইকার, ব্যবসায়ীরা সবাই খুশি। তিনি বলেন, আর খুব বেশি হলে ১০ দিন দিনাজপুরের বাজারে লিচু পাওয়া যাবে।