কাঁঠাল খেয়ে অনেকেই এর বীজ ফেলে দেন। তবে জানলে অবাক হবেন, এই বীজ বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর। কাঁঠাল বীজে প্রোটিন ও প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট আছে।

যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে শুরু করে শারীরিক বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। যদিও অনেকেরই জানা নেই কাঁঠালের বীজ খেলে শরীরে কী ঘটে সে সম্পর্কে!

কাঁঠাল বীজ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে এমনকি এই বীজে থাকা আয়রন রক্তাল্পতার চিকিৎসার জন্যও কার্যকরী। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কাঁঠালের ছোট ছোট বীজ শরীরের জন্য কতটা উপকারী।

১০০ গ্রাম কাঁঠালের বীজে থাকে ১৮৫ ক্যালোরি। একই সঙ্গে থাকে ৭ গ্রাম প্রোটিন, ৩৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ১.৫ গ্রাম ফাইবার। অন্যদিকে কাঁঠালের বীজে ১ গ্রামের কম চর্বি থাকে।

এই বীজ থায়ামিন ও রিবোফ্লাভিনেরও ভালো উৎস। এতে জিংক, আয়রন, পটাসিয়াম, তামা ও ম্যাঙ্গানিজও থাকে যথেষ্ট পরিমাণে। এই বীজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির মধ্যে আছে ফাইটোকেমিক্যাল, যেমন স্যাপোনিন।

কাঁঠালের বীজের প্রোটিন ও অন্যান্য অত্যাবশ্যক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বিভিন্ন চর্মরোগ থেকে রক্ষা করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কাঁঠালের বীজ খেরে শরীরে আরও যা ঘটে-

>> কাঁঠালের বীজে থাকা আয়রন রক্তের স্বাস্থ্য বাড়ায় ও রক্তাল্পতার চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে নারীদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দেয়।

নিয়মিত কাঁঠালের বীজ খেলে সে সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। আয়রন লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদনও বাড়ায়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।

>> কাঁঠালের বীজ কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্যান্য হজম সংক্রান্ত সমস্যাগুলির চিকিত্সা করতে পারে। কারণ এই বীজ ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় তা হজমের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। কিছু গবেষণায় বলা হয়, কাঁঠালের বীজ ডায়রিয়ার চিকিৎসার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।

>> এই বীজে ভিটামিন এ আছে, যা দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। ভিটামিন এ’র অভাবে রাতকানা রোগ হতে পারে। তাই এ বীজ পাতে রাখলে ছানি ও ম্যাকুলার অবক্ষয়ের সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়।

>> কিছু সূত্র অনুসারে, কাঁঠালের বীজে থাকা ম্যাঙ্গানিজ রক্ত জমাট বাঁধাকে নিয়মিত করতে পারে। যদিও এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

>> কাঁঠালের বীজে থাকা আয়রন যৌন আনন্দকে উদ্দীপিত করতে পারে। জানা যায়, কাঁঠালের বীজ যৌন রোগের চিকিত্সার জন্য ঐতিহ্যগত এশিয়ান ওষুধে ব্যবহার করা হয়।

>> কাঁঠালের বীজে থাকা প্রোটিন পেশি তৈরিতে সাহায্য করে। খাদ্যতালিকায় কাঁঠালের বীজ রাখলে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হবে না।

>> কমবয়সীদের মধ্যেও আজকাল বলিরেখার সমস্যা দেখা দেয়। কাঁঠালের বীজ বলিরেখাও প্রতিরোধ করে। এই বীজে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিকেলের সঙ্গে লড়াই করে।

যা অকাল বার্ধক্য সৃষ্টি করে। ফলে বলিরেখা কমে যায়। এজন্য কাঁঠালের বীজ পিষে কিংবা গুঁড়া করে তা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন। এই প্যাক ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও সাহায্য করে।

>> যাদের চুল সহজে লম্বা হয় না তারা খাদ্যতালিকায় রাখুন কাঁঠালের বীজ। এতে থাকা ভিটামিন এ ভঙ্গুর চুলের সমস্যা কমায় ও এতে থাকা প্রোটিন চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে।

ফলে চুল পড়া কমে। এমনকি এই বীজে থাকা আয়রন মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। ফলে চুল দ্রুত লম্বা হয়।

>> কাঁঠালের বীজে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে। ফলে মাথা শান্ত থাকে।

কাঁঠালের বীজ কীভাবে খাবেন?

খোসা ফেলে দিয়ে কাঁঠালের বীজ রোস্ট করে বাদামের মতো করে স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন। এছাড়া এটি সেদ্ধ করে ভর্তা, ভাজি কিংবা বিভিন্ন পদ তৈরি করতে পারেন।

চাইলে বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন কাঁঠালের বীজ। এমনকি এই বীজ ভালো করে শুকিয়ে গুঁড়া করে পানিতে মিশিয়ে দৈনিক পান করলেও মিলবে উপকার।