চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুনে ভয়াবহ হয়ে পড়েছে পরিস্থিতি। একের পর এক দগ্ধ রোগী আসছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। তাদের কান্না-চিৎকারে হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে ওঠেছে।
রোগীর সংখ্যা এতো বেশি যে, বার্ন ইউনিটে জায়গা না পেয়ে গাইনি ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে দগ্ধদের। এ অবস্থায় রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। অপরদিকে বার্ন ইউনিটের সামনে ভিড় করেছেন স্বজনরা। তাদের উৎকণ্ঠা আর শঙ্কায় কাটছে সময়।
এদিকে চট্টগ্রামের সব চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন।
দগ্ধ যত রোগী চমেক হাসপাতালে আসছেন তাদের সবাইকে আগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কত রোগী এসেছেন তার তালিকা এখনো করা হয়নি। ফলে নিশ্চিত হওয়া যায়নি দগ্ধ রোগীর সঠিক সংখ্যা।
এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল ছাড়াও নগরীর অন্যান্য হাসপাতাল এবং কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালেও (সিএমএইচ) দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা।
এদিকে আগুনে এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পাঁচজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রয়েছেন। এছাড়া আগুনে আহত হয়েছেন আরও চার শতাধিক। হতাহতদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও রয়েছেন।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আগুন এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে ছড়িয়ে পড়ে। একটি কনটেইনারে রাসায়নিক থাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে কেঁপে ওঠে অন্তত চার কিলোমিটার এলাকা। আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে।
সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত ডিপোর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সেখানে একের পর এক কনটেইনার বিস্ফোরণ হচ্ছে। নিরাপদ দূরত্বে থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বর্তমানে কাজ করছেন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনীর মোট ২৫টি ইউনিটের কর্মীরা।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে আগুন লাগার পর কনটেইনারের সামনে সরাসরি পানির পাইপ ধরে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হতাহত হন। এজন্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পাইপ হাতে না ধরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে পানি দিচ্ছেন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে করেছি, আহত দেড়শ জনের মতো হবে। তবে আহত আরও অনেক বেশি। এখানে অনেক চিকিৎসক এরই মধ্যে এসেছেন। আমরা অন্যদেরও আসার আহ্বান জানিয়েছি। হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স রোগীদের সেবায় আছেন।