চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করার সময় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পাঁচ কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২১ জন ফায়ার ফাইটার।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. মাইন উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন। রোববার (৫ জুন) সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘শনিবার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। এসময়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ফায়ার ফাইটাররাও হতাহত হয়েছেন। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও ২১ জন।’

ব্রিগেডিয়ার মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা ১৫ জন নিহতের তথ্য পেয়েছি। এছাড়া দুই শতাধিক আহতের খবর আছে আমাদের কাছে। তবে মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কেউ মারা যেতে পারেন। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’

এদিকে, বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুনে এ পর্যন্ত ১৮ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাপসাতাল সূত্র। আহত হয়েছেন আরও চার শতাধিক। হতাহতদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রয়েছেন।

অন্যদিকে বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সেখানে একের পর এক কনটেইনার বিস্ফোরণ হচ্ছে। দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুনের লেলিহান শিখা। নিরাপদ দূরত্বে থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। বর্তমানে কাজ করছেন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনীর মোট ২৫টি ইউনিটের কর্মীরা।

রোববার (৫ জুন) সকাল পৌনে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বিএম কনটেইনার ডিপোতে সরেজমিন এমন চিত্র দেখা গেছে।

আহতদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে অনেককে ওয়ার্ড ছাড়াও হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নগরীর অন্যান্য হাসপাতাল এবং কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালেও (সিএমএইচ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া চট্টগ্রামের সব চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ডিপোতে এসময় প্রায় ৫০ হাজার কনটেইনার ছিল। সেখানে থাকা দাহ্য পদার্থ থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। শনিবার দিনগত রাতে বাতাসের কারণে আগুন বাড়তে থাকে। ডিপো এলাকায় রয়েছে পানি স্বল্পতা।

পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাত পৌনে ১১টার দিকে এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একটি কনটেইনারে রাসায়নিক থাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত চার কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে।