বাইসাইকেল খুবই উপকারী এক বাহন। যাতায়াতের খরচ বাঁচাতে এমনকি শরীর সুস্থ রাখতে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। অনেকেই সাইকেল চালাতে পছন্দ করেন। আবার অনেকেই আছেন যারা নিয়মিত সাইকেলকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করেন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে।

একটি সাইকেল বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে তার যত্নআত্তিও নিতে হয়। আবার বাইসাইকেল কেনার আগেও বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। কারণ সাইকেল কেনার সময় কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তা পরে ভোগান্তির কারণ হতে পারে। তাই সাইকেল কেনার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি, যেমন-

>> ঠিক কোন কারণে আপনি সাইকেল কিনছেন তা জানা জরুরি। যেমন- শহরের মসৃণ রাস্তার জন্য রোড বাইক বেশি উপযোগী, অন্যদিকে মাটির রাস্তা কিংবা অতিরিক্ত ভাঙ্গা রাস্তায় মাউন্টেন বাইক উপযোগী।

বর্তমানে মাউন্টেন বাইকের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। এর প্রধান কারণ হলো- মাউন্টেন বাইক পিচঢালা কিংবা মাটির পথে খুব ভালোভাবে চালানো যায়। আবার এর দামও মোটামুটি সবার হাতের নাগালে।

>> আপনার বাজেট কত তা নির্ধারণ করুন। বাজারে ৫ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকার সাইকেলও আছে। তাই আপনার বাজেট কত আর কোন সাইকেল কিনবেন তা নির্ধারণ করুন। এর সঙ্গে অন্তত ১৫০০-২০০০ টাকা যোগ করবে হেলমেট, তালা, বেল, সিট কাভার, মাডগার্ড ইত্যাদি কেনার জন্য।

>> বাজেট নির্ধারণের পর কোন ব্র্র্যান্ডের সাইকেল কিনবেন তা ঠিক করুন। এখন অনেক ভালো ব্র্যান্ডের বাইসাইকেল পাওয়া যায়। ব্র্যান্ডের সাইকেলগুলো সঠিক ফ্রেম জিওমিট্রি মেনে তৈরি করা হয়, যা চালানোর জন্য অনেক আরামদায়ক ও নিারপদ। বাইসাইকেলের কয়েকটি ভালো ব্র্যান্ড হলো- জায়ান্ট, হিরো সাইকেল, ফিনিক্স, সারাসেন, রিলিগ, ট্রেক ইত্যাদি

>> বাইসাইকেল কেনার আগে এর ফ্রেম সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। অনেক ধরনের ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করা হয় সাইকেলের ফ্রেম যেমন- আয়রন ফ্রেম, এলয় ফ্রেম, টাইটেনিয়াম ফ্রেম, কার্বন ফাইবার ফ্রেম অন্যতম।
ওজন, দাম ও সহজলভ্যতা বিবেচনা করে এলয় ফ্রেমের সাইকেল সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক। তবে আপনার বাজেট লাখখ টাকা হলে কার্বন ফাইবারের ফ্রেমের সাইকেল কিনতে পারেন।

>> সাইকেলের ফ্রেমের পাশাপাশি এর সাইজও গুরুত্বপূর্ণ। যা অনেকেরই অজানা। আসলে সাইকেলের ফ্রেম সাইজ রাইডারের উচ্চতার ওপর নির্ভর করে। রাইডার লম্বা হলে বড় সাইজের ফ্রেম আরামদায়ক। তাই সাইকেল কেনার সময় রাইডারের উচ্চতার সঙ্গে সাইকেলের ফ্রেমের সাইজের অনুপাত ঠিক রেখে তবেই কিনবেন।

>> লুক দেখেই অনেকে সাইকেল কেনেন। তবে এর পাশাপাশি সাইকেলের গুণমানও বিবেচনা করতে হবে। বিশেষ করে সাস্পেনশন, চাকা, টায়ার, ফ্রন্ট ও রিয়ার ডেরা, গিয়ার শিফটার, ব্রেক সেট ইত্যাদি বিষয়ের উপরও খেয়াল রাখতে হবে

অনেক ধরনের ব্রেক সেট থাকে সাইকেলে, যেমন- ভি-ব্রেক, ডিস্ক ব্রেক, হাইড্রোলিক ব্রেক ইত্যাদি।
হাইড্রোলিক ব্রেক সবচেয়ে কার্যকর তবে এর দামও বেশি।

>> দোকান থেকে সাইকেল কেনার পর অবশ্যই সেখান থেকে সেল রিসিট নিয়ে নেবেন। সেখানে যেন সঠিকভাবে সাইকেলের ফ্রেম নাম্বার লেখা থাকে। সাইকেল হারিয়ে গেলে কিংবা বিক্রির সময় এই সেল রিসিটই কাজে আসবে।

সাইকেল কেনার পর তা ভালো রাখতে নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। তাহলে দীর্ঘদিন সাইকেলটি চালাতে পারবেন। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক কীভাবে সাইকেলের যত্ন নেবেন-

>> প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার সাবানপানি অথবা ডিটারজেন্ট মেশানো পানি দিয়ে সাইকেলের ফ্রেম পরিষ্কার করুন।

>> বৃষ্টিতে সাইকেল ভিজে গেলে পরক্ষণে সাইকেল ভালোভাবে মুছে পরিষ্কার করুন। বিশেষ করে চেইনের অংশটুকু পরিষ্কার রাখা জরুরি। কারণ চেইনে কাদা-পানি লেগে মরিচা পড়তে পারে।

চেইন পরিষ্কারের জন্য ব্রাশ অথবা পাতলা কাপড় ব্যবহার করুন। পরিষ্কার শেষে চেইনে সেলাই মেশিনের তেল ব্যবহার করুন। এতে করে চেইনের ঘূর্ণন মসৃণ হবে।

>> সাইকেল চালানোর সময় কোনো ধরনের শব্দ শুনতে পেলে বা অতিরিক্ত শ্রম হলে তা পরীক্ষা করুন। বড় সমস্যা দেখা দিলে সাইকেল মেরামতের দোকানে নিতে পারেন।

>> সাইকেলের দুই চাকায় নিয়মিত হাওয়া দিন। এ ক্ষেত্রে বাড়িতে হাওয়া দেওয়ার যন্ত্র রাখতে পারেন।

>> সাইকেল চালানোর সময় সমতল রাস্তায় চালানোর চেষ্টা করুন। এতে কষ্টও কম হবে আবার সাইকেলও ভালো থাকবে।

>> সাইকেল মেরামতের জন্য ছোটখাটো সরঞ্জাম ও তেল নিজের কাছেই রাখুন। সম্ভব হলে প্রতি মাসে অন্তত একবার সাইকেলের সার্ভিসিং করুন দোকানে নিয়ে।