পদ্মা সেতু পারাপারে টোল আদায় করা হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) কার্ড যানবাহনে থাকলে টোল বুথে থাকা ডিভাইসের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট টাকা কেটে নেওয়া হবে। এজন্য সেতুর দুই প্রান্তে মোট ১৪টি ইলেক্ট্রনিকস টোল কালেকশন (ইটিসি) বুথ বসিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোরিয়ান কোম্পানি। প্রাথমিকভাবে দুই প্রান্তে একটি করে মোট দুটিতে চালু থাকছে ইটিসি। আর আটটি টোলপ্লাজায় টোল আদায় করা হবে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। তবে আরএফআইডি সম্বলিত বাহন বাড়লে ইটিসি বুথও বাড়ানো হবে।
সেতু বিভাগ জানায়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল দিতে চাইলে যানবাহনের মালিকদের একটি সিস্টেম চালু করে নিতে হবে। এটা হলো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি)। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ফাস্ট ট্র্যাকের মাধ্যমে মাত্র দুই থেকে তিন সেকেন্ডের মধ্যে টোল আদায় হবে এতে। আরএফআইডির জন্য যত নিবন্ধন বাড়বে তত বুথ ইটিসির আওতায় আসবে। কারণ ইটিসি বুথ চালু করলেই হবে না, যানবাহনগুলোকে আরএফআইডির জন্য নিবন্ধনও বাড়াতে হবে। আর পদ্মা সেতু সাইকেল বা হেঁটে পার হওয়ার সুযোগ থাকছে না।
স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল দিতে যেভাবে নিবন্ধন করবেন
ডিজিটাল পেমেন্টের জন্য যানবাহনে অবশ্যই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অনুমোদিত সচল আরএফআইডি ট্যাগ থাকতে হবে। গাড়ির মালিক ব্যাংকে বা টোলপ্লাজায় গিয়ে আরএফআইডির জন্য সরাসরি নিবন্ধন করাতে পারবেন। মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের মালিকদের অবশ্যই হিসাব থাকতে হবে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক অথবা রকেট মোবাইল অ্যাকাউন্টে। রকেট অ্যাকাউন্টটি নেক্সাস-পে অ্যাপ্লিকেশনটিতে আগে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের পর তারা ইলেকট্রনিক টোল দেওয়ার এ সুবিধা পাবেন।
যেভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল কাটা হবে
আরএফআইডি সাদা রঙের একটি কার্ড, যা যানবাহনের সামনের অংশের ড্যাশবোর্ডে থাকবে। আরএফআইডি নম্বরটি সংযুক্ত থাকবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে। অথবা এ আইডিতে অগ্রিম টাকা রিচার্জ করতে হবে। এটি সম্পূর্ণ প্রি-পেইড কার্ড। টোলপ্লাজায় থাকবে একটি যন্ত্র। এতে থাকবে কার্ড রিডার। যানবাহন যতবার পদ্মা সেতুতে উঠে ইটিসি বুথ দিয়ে যাবে ততবার বেঁধে দেওয়া টোলের টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেবে। পাশাপাশি গাড়ির মালিকের মোবাইলে এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হবে কত টাকা কাটা হলো।
ডিভাইসটি যেভাবে কাজ করবে
আরএফআইডি ডিভাইসটি মূলত কাজ করে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে। এটি অনেকটা পণ্যের বারকোড দেখার প্রযুক্তির মতো। তবে পার্থক্য হলো, আরএফআইডি ব্যবহার করে কিছুটা দূরের ট্যাগ বা কোডও পড়া যায়। এতে টোলপ্লাজায় যানবাহনকে অপেক্ষা করতে হবে না।
সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে মোট ১৪টি টোলপ্লাজা রয়েছে। ২৫ জুন উদ্বোধনের দিন ১০টি চালু করা হবে। ১০টির মধ্যে দুটি ইটিসি বুথ হবে। এই বুথ দিয়ে যাতায়াত করা যানবাহনগুলোকে থামতে হবে না। বুথ ক্রসের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোলের হার অনুযায়ী টাকা কেটে নেওয়া হবে। তবে যানবাহনে আরএফআইডি থাকতে হবে। এটা একটা সাধারণ কার্ডের মতো। গাড়ির সামনে এটা ব্যবহার করা হবে। কার্ডে যদি টাকা না থাকে তবে গাড়িটি আটকে যাবে। কার্ডের সঙ্গে ব্যাংক অ্যাকাউন্ড যুক্ত থাকবে।’
টোল আদায় প্রসঙ্গে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে সব ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, বিশেষ করে টোল আদায়ের ক্ষেত্রে। আমরা সেতু নির্মাণ করে দিচ্ছি, টোল আদায় করবে অন্য একটি বিভাগ। তবে আমি বলতে পারি পদ্মা সেতুতে প্রথমদিন থেকেই ইটিসি বুথ কার্যকর থাকবে। ফলে ফুল স্পিডে গাড়ি যাবে এবং গাড়ির ড্যাশবোর্ডে যন্ত্র লাগানো থাকবে ওখান থেকেই সংকেতটা নিয়ে নেবে। গাড়িতে লাগানো যন্ত্রটা প্রি-পেইড, গাড়ি গেলেই টাকা কেটে দেবে।’
সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে টোল দিতে থামতে হবে না। সেই প্রযুক্তি সেতুর টোলপ্লাজায় স্থাপিত হয়েছে। সব ধরনের আধুনিক ব্যবস্থা টোলপ্লাজায় রয়েছে।’
দেশের মানুষের বহু প্রতীক্ষিত এ সেতু ২৫ জুন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। এরপর উন্মুক্ত হবে সর্বসাধারণের জন্য।