গৌরবের প্রতীক পদ্মা সেতু ২৫ জুন খুলে দেওয়া হচ্ছে। সেতুকে ঘিরে শরীয়তপুরের মানুষের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় সতের বছরের ভগ্নদশা পরিবহন খাতও ডানা মেলেছে স্বপ্ন ছোঁয়ার। বিনিয়োগ হচ্ছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। যা পদ্মা সেতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে জেলার যোগাযোগ ক্ষেত্রকে নিয়ে যাবে নতুন উচ্চতায়। এরইমধ্যে জেলার চারটি কোম্পানির দুই শতাধিক এসি-ননএসি বাস প্রস্তুতে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিকরা।

শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ ও পরিবহন ব্যবসায়ীরা জানান, শরীয়তপুর ঢাকার খুব কাছের জেলা হলেও পদ্মা নদী ও সড়কের বেহাল দশার কারণে যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও সময় সাপেক্ষ। তাইতো পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে নতুন করে জেগে উঠেছে প্রায় ভগ্নদশায় থাকা শরীয়তপুরের পরিবহন খাত। যাত্রীদের আধুনিক সেবা নিশ্চিত করতে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানি, শরীয়তপুর পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন ও গ্লোরি এক্সপ্রেসসহ আরও অনেক কোম্পানিই এ খাতে নতুনভাবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন। পরিবহনের সোনালী দিনের অপেক্ষায় মালিকপক্ষও।

তারা আরও জানান, জেলার বাসিন্দারা নৌপথ দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করেন। পদ্মা সেতু চালুর খবরে শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে সরাসরি বাস চালানোর উদ্যোগ নেয়। শরীয়তপুর থেকে ঢাকার গুলিস্তান, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ভুলতা, গাউছিয়া ও নারায়ণগঞ্জে বাসগুলো চলাচল করবে। ব্যবসায়ীরাও এ জন্য নতুন গাড়ি প্রস্তুত করছেন। এরই মধ্যে ভলভো, আইচার, অশোক লিলেন্ড, টাটা গাড়ির (বাস) চেসিস কেনা হয়েছে। ২৫ জুন সেতুর সঙ্গে নতুন গাড়ির বহর যোগ করতে শরীয়তপুর-মাদারীপুরসহ ঢাকা, সাভার বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকরা দিন-রাত বাস প্রস্তুতের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলেছে সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ। তারা ৫০টি নতুন বাস প্রস্তুত করছে। এছাড়া পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন ও গ্লোরি পরিবহন ঢাকার সঙ্গে বাস চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিটি কোম্পানি নতুন বাস আনার পরিকল্পনা করছে। তাদের মধ্যে পদ্মা ট্রাভেলস ও শরীয়তপুর পরিবহনের কয়েকটি বাস এরই মধ্যে ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া পর্যন্ত চলাচল করছে। কোম্পানিগুলো প্রাথমিকভাবে ৩০০টি বাস প্রস্তুত করছে। যার একেকটিতে খরচ পড়ছে ৮০ লাখ থেকে ৯০ লাখ টাকা।

পদ্মা সেতুর সঙ্গে নতুন গাড়ির সংযুক্তি ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করছেন শরীয়তপুর জেলার মানুষ। সদর উপজেলার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন সরদার বলেন, ‘আমি জীবনে কখনো শরীয়তপুর থেকে সরাসরি বাসে ঢাকা যাইনি। অনেক দুর্ভোগ ও ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করি। পদ্মা সেতু চালু হলে জেলা শহর থেকে দুই ঘণ্টায় ঢাকায় যাবো। ভাবতেই ভালো লাগছে।’

শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানির মালিক পক্ষের একজন সাইম মোল্লা। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হবে এ স্বপ্ন নিয়ে দীর্ঘদিন লোকসানে থেকেও ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি। আমি পরিবহন খাতে বিনিয়োগ করেছি। পদ্মা সেতু যেদিন খুলবে, সেদিন থেকেই আমরা ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করতে চাই। আমাদের কোম্পানির এসি ও ননএসি বাস চলবে।

পদ্মা ট্রাভেলসের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিনে বাস সার্ভিস চালু করা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে আমাদের শরীয়তপুর-ঢাকা ১২টি বাস চলবে আশা রাখি।’

গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আইচারের বিক্রয় কর্মকর্তা নকুল চন্দ্র হালদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু ঘিরে ঢাকায় নতুন বাস চালাতে পরিবহন মালিকরা তাদের কাছ থেকে ইঞ্জিনসহ চেসিস কিনছেন। কেউ নগদে, আবার কেউ কিস্তিতে নিচ্ছেন। ভালো সাজসজ্জার পাশাপাশি বডি বানিয়ে নিচ্ছেন। যাত্রীরা নতুন সেতু দিয়ে আধুনিক বাসে আরামদায়কভাবে যাতায়াত করতে পারবেন।’

শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি ফারুক আহাম্মদ তালুকদার বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনে বাস চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে যাঁদের রুট পারমিট আছে, তাঁরাই নতুন বাস নামাচ্ছেন। শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস কোম্পানি, পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন ও গ্লোরী পরিবহন রুট পারমিট নিয়ে নতুন বাস প্রস্তুত করছে। অন্য কেউ বাস চালাতে চাইলে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে রুট পারমিট নিতে হবে।’

এ বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে দুই শতাংশের ওপরে জিডিপি বাড়বে। এরই মধ্যে পরিবহন খাতসহ অন্য উন্নয়ন খাতে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।’