আমদানির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রপ্তানি বাড়ছে না। এতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই থেকে এপ্রিল) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৫৬ কোটি ডলার, যা এর আগের অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়েও ৩৭৯ কোটি ডলার বেশি।

বৃহস্পতিবার (২ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

একটি দেশের আমদানি ও রপ্তানির মধ্যকার সম্পর্ক হলো বাণিজ্য ঘাটতি। ইতিবাচক ভারসাম্যকে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বলে। তখন আমদানির থেকে রপ্তানি বেশি হয়। নেতিবাচক ভারসাম্যকে বলা হয় বাণিজ্য ঘাটতি, যা রপ্তানির থেকে আমদানি বেশি হলে হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৫৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা তার আগের অর্থবছরের (প্রথম ১০ মাস) একই সময় ছিল এক হাজার ৮০১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে (জুলাই-জুন) বাণিজ্য ঘাটতি ছিল দুই হাজার ৩৭৭ কোটি ডলার।

আমাদের দেশে আমদানির তুলনায় পণ্য রপ্তানি কম হওয়ায় বরাবরই বাণিজ্য ঘাটতি থাকে। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ব্যাপক হারে বেড়ে যায় আমদানি। এতে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে বড় ব্যবধান তৈরি হয়। এসব কারণে রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ।

চলতি অর্থবছরের আলোচিত সময়ে (জুলাই-এপ্রিল) রপ্তানি বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর বিপরীতে আমদানি বেড়েছে ৪১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এ সময়ে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে চার হাজার ১১০ কোটি ডলার। পণ্য আমদানির পেছনে দেশ ব্যয় হয়েছে ছয় হাজার ৮৬৬ কোটি ডলার। আমদানি থেকে রপ্তানি বাদ দিয়ে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৫৬ কোটি ডলার।

সেবা খাতেও বেড়েছে ঘাটতি। চলতি অর্থ্ছরের ১০ মাসে সেবা খাতে আয় হয়েছে ৭৯৫ কোটি ডলার। এর বিপরীতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ১১৪ কোটি ডলার। সে হিসাবে এ খাতে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩১৯ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২১৫ কোটি ডলার।

চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আলোচিত সময়ে ঘাটতির (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৩২ কোটি ডলার। যা তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১৬৫ কোটি ডলার। আর সামগ্রিক লেনেদেনে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের (২০২০-২০২১) একই সময়ে এ সূচকে ৭৪৯ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

সর্বনিম্ন রপ্তানি আয়: টানা নয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রপ্তানি আয় এসেছে সদ্য বিদায়ী মে মাসে। মে মাসে ৩৮৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) গত আগস্টের পর এটিই একক মাস হিসেবে সর্বনিম্ন। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ৪ হাজার ৭১৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে তৈরি পোশাক। এর পরই হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত ও প্রকৌশল পণ্য।

মে মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীরা ১৮৮ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। গত বছরের (২০২১ সালের) একই মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২১৭ কোটি ডলার। ফলে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত মাসে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।