শিল্প-কারখানার বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র বা ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) অনলাইন ব্যবস্থাপনার আওতায় আসছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা উপলক্ষে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, শিল্প-কারখানাগুলো ইটিপি স্থাপনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু কোনো কোনো শিল্প-কারখানা ইটিপি স্থাপন করলেও সেগুলো চালু রাখেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ইটিপি অনলাইনের আওতায় আসলে সেগুলো চলছে না বন্ধ আছে তা সরকার দূর থেকেই জানতে পারবে।
বায়ুদূষণ রোধে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রায় প্রতি বছর ঢাকার বাতাস দূষণের শীর্ষে থাকছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি শাহাব উদ্দিন বলেন, আমাদের দেশ ভারত, পাকিস্তানসহ এই উপমহাদেশের বায়ু দূষিত হয়। দেখা যায়, কখনো বাংলাদেশ এক নম্বরে, কখনো দিল্লি, আবার কখনো পাকিস্তানের করাচি এক নম্বরে থাকে। আমরা এরই মধ্যে বায়ু দূষণ রোধ করতে একটি বিধিমালা করতে যাচ্ছি। এটি আগামী সংসদে পাস হলে বায়ু দূষণ রোধ করতে সরকারের যা করণীয় তাতে হাত দেবো। আমরা এরই মধ্যে সেই কাজ করে যাচ্ছি।
বিধিমালায় কী থাকছে, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের পরিবেশ আইন আছে, সেটার সঙ্গে আমরা পরিবেশ দূষণ মুক্ত করতে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করবো। এছাড়া বায়ু দূষণ হচ্ছে যেসব কারণে সেগুলো বন্ধ করতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত থাকবে বিধিমালায়।
‘বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরিমাপ যন্ত্র আমরা বসিয়েছি। এতে আমরা জানতে পারছি যে কী পরিমাণে কোথায় দূষণ হচ্ছে। আপনারা জানেন যে আমাদের উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। এই কাজের জন্য কিছু বায়ু দূষণ হয়। গাড়ির কালো ধোঁয়া, ইন্ডাস্ট্রি ও ইট ভাটাগুলো বায়ু দূষণের জন্য দায়ী। ইট ভাটাগুলোকে আমরা এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণে এনেছি। আমরা ২০২৫ সালে ব্লক ইটে চলে যাবো। এতে দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, গাড়ির কালো ধোঁয়ার বিষয়ে আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতায় একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর অধীনে আমরা কালো ধোয়া পরিমাপ যন্ত্র বসিয়ে সেটাকে মাপা হবে। এটার তথ্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হবে, যেন সেই গাড়ি আর ফিটনেস না পায়। এ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।
শাহাব উদ্দিন বলেন, আমরা কালো ধোঁয়া, ইটের কালো ধোঁয়া, উন্নয়নের কারণে দূষণ এবং ইন্ডাস্ট্রিগুলো যে দূষণ করছে এর পুরোটাকেই আমরা ইটিপির আওতায় নিয়ে আসবো এবং অনলাইনে নিয়ে আসবো। যেন করে অফিসে বসেই দেখা যায় এই ইটিপিগুলো চালাচ্ছে কিনা।
জাতীয় জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা ও মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান প্রণয়য়ের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান পরিবেশমন্ত্রী।
পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্নমুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইটভাটা সৃষ্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি জমির উর্বর মাটি রক্ষার লক্ষ্যে সরকার ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯)’ জারি করেছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ৫১৬টি অভিযান পরিচালনা করে ২ হাজার ৫৯৪টি ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮২৮টি অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ বা কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে এবং ৬২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের অধীন পরিবেশ অধিদপ্তর জলাশয় ভরাট, পাহাড় বা টিলা কর্তন, কৃষি জমির ক্ষতি, নদীর পানি দূষণ, বায়ুদূষণসহ পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার ক্ষয়-ক্ষতির জন্য দূষণকারী নয় হাজার ৪১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে ২২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে- যোগ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বনভূমি থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বনভূমি সৃজন কষ্টসাধ্য। বর্তমানে দেশে বৃক্ষাচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ মোট ভূমির ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং বনাচ্ছাদন ১৪ দশমিক ০১ শতাংশ। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বৃক্ষাচ্ছাদন ২৫ শতাংশে এবং বনাচ্ছাদনের পরিমাণ মোট ভূমির ১৬ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে বনায়ন ও বন সংরক্ষণ, অবক্ষয়িত বন পুনরুদ্ধার এবং টেকসই বন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বন অধিদপ্তর চার হাজার ৭২৯ হেক্টর বনভূমি জবরদখল মুক্ত করে বনায়ন করে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পরিবেশ মন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বন অধিদপ্তর প্রায় সাত হাজার ২২০ হেক্টর সমতল ভূমি ও শাল বন পুনরুদ্ধার, এক লাখ ৩০ হাজার ৫৮০ হেক্টর পাহাড়ি বন পুনরুদ্ধার, ৫০০ হেক্টর আগর বন, ১৫ হাজার কিলোমিটার দ্বীপ বাগান, ৫০ হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগানসহ অন্যান্য বাগান সৃজন করা হবে। বনাচ্ছাদন বৃদ্ধিতে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ম্যানগ্রোভসহ ২৯ হাজার ১২৪ হেক্টর ব্লক বাগান এবং গোলাপাতাসহ এক হাজার ৫৭৪ কিলোমিটার দ্বীপ বাগান সৃজন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ জুন বেলা ১১টায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। একই সঙ্গে ৫ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত পরিবেশ মেলা ও ৫ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা উদ্বোধন করবেন।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘অনলি অন আর্থ: লিভিং সাসটেইনেবিলিটি ইন হারমনি উইথ ন্যাচারৎ, এর ভাবানুবাদ, ‘একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐকতানে টেকসই জীবন।’ জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘বৃক্ষ-প্রাণে প্রকৃতি প্রতিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ।’
সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সচিব ফারহিনা আহমেদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।