পাকিস্তানের জনগণকে চমকে দিয়ে হঠাৎ করে ভোজ্যতেলের দাম একলাফে লিটারপ্রতি ২১৩ রুপি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে শাহবাজ শরিফের সরকার। দেশটিতে এখন সরকার নির্ধারিত ভোজ্যতেলের দাম প্রতি লিটার ৬০৫ রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৭১ টাকা প্রায়)। তবে সরকার নির্ধারিত তেলের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়লেও পাকিস্তানের খুচরা বাজারে এখনো তা কম দামেই বিক্রি হচ্ছে। বুধবার (১ জুন) পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে ঘিয়ের দাম কেজিতে ২০৮ রুপি এবং ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ২১৩ রুপি বাড়িয়ে যথাক্রমে ৫৫৫ রুপি ও ৬০৫ রুপি করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ত সুপারশপ পরিচালনাকারী সংস্থা ইউটিলিটি স্টোর করপোরেশনের (ইউএসসি) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বুধবার থেকে দেশটিতে ঘি ও ভোজ্যতেলের বর্ধিত মূল্য কার্যকর হয়েছে। এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ইউএসসি। তবে সরকার এতটা নির্দয়ভাবে হঠাৎ তেল-ঘিয়ের দাম কেন বাড়ালো সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

ডনের খবরে বলা হয়েছে, সরকার পরিচালিত ইউটিলিটি স্টোরগুলোতে ঘি প্রতি কেজি ৫৫৫ রুপি এবং ভোজ্যতেল প্রতি লিটার ৬০৫ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারগুলোতে ঘি ও তেলের দাম এখনো বেশ কম। পাকিস্তানে খুচরা বাজারগুলোতে ঘি-তেলের সুপরিচিত ব্র্যান্ডগুলো এখনো ৫৪০ থেকে ৫৬০ রুপি কেজি/লিটার দরে বেচাকেনা চলছে।

অবশ্য পাকিস্তান বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (পিভিএমএ) মহাসচিব উমর ইসলাম খান ইঙ্গিত দিয়েছেন, দেশটির খুচরা বাজারে ঘি ও ভোজ্যতেলের দাম শিগগির ইউএসসির দামের সমান হবে।

তিনি বলেছেন, ঘি বা ভোজ্যতেল প্রস্তুতকারীরা ইউএসসি’কে ধারে পণ্য দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ তাদের পাওনা ২০০ থেকে ৩০০ কোটি রুপি এখনো পরিশোধ করেনি সংস্থাটি।

উমর জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী টাস্কফোর্স কমিটি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পিভিএমএ’র কর্মকর্তারা বাজারে পাম তেলের চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি বিশ্লেষণে প্রতিদিন জুম মিটিং করছেন। তিনি বলেন, করাচি বন্দরে এখনো ১ লাখ ৬০ হাজার টন পাম তেল মজুত রয়েছে, যা তিন সপ্তাহের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। তবে গত ২৩ মে ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তোলার পরে দেশটির বন্দরে পাকিস্তানের কোনো জাহাজে মাল তোলা হয়নি বা একটি জাহাজও পাকিস্তানের পথে রওয়ানা দেয়নি।

এ অবস্থায় মালয়েশিয়া থেকে পাম তেল আমদানিতে বাড়তি দুই শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে পিভিএমএ। কারণ ইন্দোনেশিয়ার তুলনায় মালয়েশিয়া থেকে পাম তেল আমদানিতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ খরচ বেশি পড়ে পাকিস্তানের।

দক্ষিণ এশীয় দেশটি অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৮৭ শতাংশ পাম তেল কেনে ইন্দোনেশিয়া থেকে, বাকি অংশ নেয় মালয়েশিয়া থেকে।

ইন্দোনেশিয়ায় দুই মাসের ব্যবধানে প্রতি টন পাম তেলের দাম ১৯শ’-২০০০ মার্কিন ডলার থেকে কমে ১৭শ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তাহলে পাকিস্তানে কেন ভোজ্যতেলের দাম কমছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে উমর ইসলাম বলেন, তেলের শিপমেন্ট বুক করা হয়েছিল বাড়তি দামে। তাছাড়া পাকিস্তানি রুপির অবমূল্যায়নেও ল্যান্ডিং খরচ বেড়ে গেছে।