ভারতে কৃষকদের কাঁদিয়েই চলেছে পেঁয়াজ। মহারাষ্ট্রের নাশিক, ধুলেসহ দেশটির প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকাগুলোতে ক্রমাগত কমছে দাম। কোথাও কোথাও পেঁয়াজের কেজি মাত্র তিন রুপিতে নেমেছে। ফলে লাভের আশায় গুঁড়েবালি, এখন উৎপাদন খরচই ওঠানোই কঠিন হয়ে গেছে ভারতীয় কৃষকদের কাছে।
শুক্রবার (২৭ মে) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহারাষ্ট্রের বুলধানা, অমরাবতী, আকোলার মতো জেলাগুলোয় ক্ষেত থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ তিন থেকে পাঁচ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে নিম্নমানের হলে তার দাম মিলছে কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা থেকে দুই রুপি।
নাগপুরের কালামনায় স্থানীয় কৃষি উৎপাদন বিপণন কমিটির উঠানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে নয় থেকে ১০ রুপিতে, তবে তা কেবল সেরা মানের জন্য। নিম্নমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে একেবারে পানির দামে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, উৎপাদিত পেঁয়াজ কালামনায় পৌঁছাতে কৃষকদের খরচ হয় কেজিপ্রতি ১ দশমিক ৬০ রুপি থেকে দুই রুপি। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৫ থেকে ২০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে।
ভারতে এই মুহূর্তে পেঁয়াজ রপ্তানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে তাদের অন্যতম প্রধান ক্রেতা বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানি আপাতত বন্ধ রেখেছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, রপ্তানির সুযোগ পেলে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম আবারও বাড়তে পারে।
ভারতীয় কৃষক সংগঠন শেতকারি সংগঠনা নাশিকের ইওলাতে এক প্রতিবাদ সমাবেশের পরিকল্পনা করছে। সংগঠনটির নেতা ললিত বাহেল বলেন, আমরা পেঁয়াজ ব্যবসায় সরকারি হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণ বন্ধ করার মতো দাবিগুলো উপস্থাপন করবো। পেঁয়াজের দাম কমলে আমাদের সাহায্য লাগবে না, দাম বাড়লেও সরকারের কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে না। কন্টেইনার ঘাটতির কারণে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, এটি তিনিও স্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, দাম কমে যাওয়ায় হতাশ ভারতীয় কৃষকরা পেঁয়াজ মজুত করতে শুরু করেছেন। পরে দাম বাড়লে বিক্রি করার আশা করছেন তারা। তবে এর জন্যে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে কৃষকদের।
আকোলা জেলার আকোলি জাঙ্গির গ্রামের বাসুদেব খান্ডেরাও বলেছেন, তিনি প্রতি কেজি পেঁয়াজে মাত্র পাঁচ রুপি পাওয়ার পর আর বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাসুদেব বলেন, বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যেতে পারে। তবে এর জন্য খরচ রয়েছে, যা সবার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।
ভারতের ন্যাশনাল এগ্রিকালচার কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন (এনএএফইডি) নাশিক, ধুলে, জলগাঁও ও পুনেতে পেঁয়াজ কেনা শুরু করেছে। তবে বিদর্ভে এমন কোনো উদ্যোগ নেই। তাছাড়া এনএএফইডির ক্রয় ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় কৃষক সংগঠনের।