ইতিহাসের ধারক ও বাহক জামালপুরের গান্ধী আশ্রম। ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধীর নামে প্রতিষ্ঠিত এ আশ্রম। ব্রিটিশ শাসনামলে মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশি মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিল ভারতবর্ষের মানুষ। স্বদেশি চেতনায় ভারতজুড়ে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছিল গান্ধী আশ্রম।

সেই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৩৪ সালে নাসির উদ্দিন সরকার নামে স্থানীয় এক গান্ধীভক্ত জামালপুরের মেলান্দহের ঝাউগড়া ইউনিয়নের এক নিভৃত পল্লী কাপাসহাটিয়া গ্রামে গড়ে তোলেন গান্ধী আশ্রম। আশ্রমে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নানা কর্মপরিকল্পনা ছাড়াও চরকায় সুতা তৈরি, নারীদের হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ, লেখাপড়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। এক সময় আশ্রমটি পরিণত হয় বাংলার মুক্তিকামী মানুষের অন্যতম মিলনমেলায়।

জানা গেছে, আশ্রমটি প্রতিষ্ঠার পর শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, কমরেড মণি সিংহ, বারীন দত্ত, প্রফেসর শান্তিময় রায়, কমরেড আশুতোষ দত্ত, কমরেড রবি নিয়োগী, নগেন মোদক, বিধূভূষণ সেন, সুরেন্দ্র মোহন ঘোষ, মনোরঞ্জন ধর, নরেন নিয়োগী, রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজী, কৃষক নেতা হাতেম আলী খান, আবদুস সাত্তার, হেমন্ত ভট্টাচার্য, মন্মথনাথ দে, খন্দকার আবদুল বাকীসহ অনেক বিশিষ্টজনই তাদের জীবদ্দশায় এখানে পরিদর্শনে এসেছিলেন।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর আশ্রমের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে ২০০৭ সালের ২ অক্টোবর গান্ধীর জন্মদিন উপলক্ষে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে পুনরায় শুরু হয় মানব কল্যাণের গান্ধী আশ্রমের নানা কার্যক্রম। পাশেই গড়ে তোলা হয় মুক্তিসংগ্রাম নামে আরও একটি জাদুঘর। করোনাকালে বন্ধ থাকলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠান দুটির নানা স্মৃতিচিহ্ন দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।

নাসির উদ্দিন সরকারের নাতি ও ট্রাস্টি সদস্য হিল্লোল সরকার জাগো নিউজকে বলেন, মহাত্মা গান্ধীর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসকে কেন্দ্র করেই মূলত গান্ধী আশ্রম গড়ে ওঠে। পাশাপাশি গড়ে ওঠে মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের সংগ্রহশালা। বাংলাদেশের এই প্রথম একটি স্থানেই দুটি প্রতিষ্ঠান। এখানে মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর যেমন দেখা যায় তেমনি গান্ধী আশ্রমও দেখা যায়। জেলার যেকোনো স্থান থেকে খুব সহজেই এখানে আসা যায়। তবে আশ্রমে যাওয়ার রাস্তাটি সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি।

তিনি আরও বলেন, গান্ধীর স্বদেশি চেতনা এবং বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে প্রতিষ্ঠান দুটি কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতে সারাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সকল ইতিহাস এখানে সংরক্ষণ করা হবে। এভাবেই প্রতিষ্ঠান দুটি হয়ে উঠবে ইতিহাসের এক সংগ্রহশালা।

মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সেলিম মিঞা বলেন, এ আশ্রমটি সম্পর্কে আগেই জেনেছি। তবে আমি নতুন এসেছি, তাই এখনও আশ্রমে যাওয়া হয়নি। আশ্রমে যাওয়ার যে ভাঙাচোরা রাস্তা রয়েছে তা অবশ্যই মেরামত করা হবে বলেও জানান তিনি।

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, গান্ধী আশ্রমে যাওয়ার রাস্তাটি এলজিইডির আওতাধীন। তবে গান্ধী আশ্রমের সার্বিক উন্নয়নে জেলা পরিষদ আগে থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও আশ্রমের উন্নয়নে আরও কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।