বর্তমানে লিভারের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১০০টিরও বেশি লিভারের রোগ আছে। আবার এসব লিভারের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ ভিন্ন হতে পারে। যেমন- সংক্রমণ, মদ্যপান, ওষুধ, স্থূলতা, ক্যানসার ইত্যাদি কারণেও লিভারের রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

কারও কারও ক্ষেত্রে লিভারে রোগ বাসা বাঁধতেই বিভিন্ন উপসর্গ শরীরে ফুটে ওঠে, আবার অনেকের অজান্তেই লিভারের অসুখ বেড়ে যায় কোনো উপসর্গ ছাড়াই। আবার এমনো হয় যে, অনেকেই সেসব লক্ষণ বা উপসর্গ টের পান না।

প্রারম্ভিক লিভারের রোগের লক্ষণ কী কী?

পেট ব্যথা, ক্ষুধা না লাগা, ক্লান্তি বা শক্তির অভাব, ডায়রিয়াসহ বেশ কিছু লক্ষণ লিভারের সমস্যা হলে দেখা দিতে পারে। তবে অনেকেই বিষয়গুলো সাধারণ ভেবে অবহেলা করেন। এছাড়া আরও ৯ লক্ষণ আছে যেগুলো দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে-

>> ত্বক বা চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া জন্ডিসের লক্ষণ। যখন লোহিত রক্তকণিকা থেকে বিলিরুবিন নামক একটি হলুদ পদার্থের অত্যধিক পরিমাণ তৈরি হয়, তখন এ সমস্যা দেখা দেয়। লিভার সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে বিলিরুবিন পরিষ্কার করতে পারে না। ফলে শরীরে বিলিরুবিনের প্রভাব বাড়তে থাকে।

>> দীর্ঘস্থায়ী লিভারের সমস্যায় ভুগলে ত্বকে চুলকানি অনুভব করতে পারেন। ত্বকে ফুসকুড়ি না থাকলেও এমনটি ঘটে। এর ফলে ঘুমেও প্রভাব পড়তে পারে। ওষুধের সাহায্যে এই চুলকানিভাব কমানো যায়। তার আগে লিভারের রোগ শনাক্ত করা জরুরি।

>> পেট ফুলে ওঠাও লিভারের সমস্যার কারণ হতে পারে। লিভারে রক্ত প্রবাহকে বাঁধা দিলে এর চারপাশে রক্তনালিতে চাপ বাড়ে। যা পেট থেকে তরল বের করে ও তা সংগ্রহ করে। এ কারণে পেট বড় হওয়ার লক্ষণকে অবহেলা করবেন না।

>> লিভারের সমস্যা হলে অনেকেরই পা ও গোড়ালি ফুলে যায় ও তরল জমা হয়। কম লবণ খাওয়া ও ওষুধের সাহায্যে এ সমস্যা কমানো যায়।

>> প্রস্রাবের রং গাঢ় ও ফ্যাকাশে মলত্যাগ করলে সাধান হয়ে যান। লিভারের সমস্যা হলে মলের রং বাদামি হয়। জন্ডিসের সমস্যা বেড়ে গেলেও ফ্যাকাশে মলত্যাগ হতে পারে। অতিরিক্ত বিলিরুবিন ত্বক এমনকি প্রস্রাবের রংও গাঢ় করে তোলে।

>> লিভার রোগে আক্রান্ত অনেকেই দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তিতে ভোগেন। শরীরে টক্সিন তৈরি হওয়ার কারণে এটি ঘটে। শরীর ও রক্ত প্রবাহে বিষাক্ত পদার্থ বেড়ে গেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাতেও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ফলে হঠাৎ করেই বিভিন্ন বিষয় ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।

>> অতিরিক্ত পেট খারাপের সমস্যা হলেও সাধান হতে হবে। লিভারের রোগের কারণে শরীরে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে গেলে পেট খারাপ ও বমি বমি ভাব ও বমি হতে পারে। লিভার ফেইলিওরের ক্ষেত্রে বমি বা মলের সঙ্গেও রক্ত পড়তে পারে।

>> লিভার ফেইলিওরের কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃ্ষ্টি হতে পারে। নাক দিয়ে রক্তপাতও হতে পারে। অনেকের আবার শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যায়।

>> ত্বকের নিচে রক্তনালিগুলো দেখা যাওয়া কিংবা মাকড়সার জালের মতো লালচে হয়ে ওঠার লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এগুলো প্রায়শই গাল, নাক ও ঘাড়ে ঘটে। এমন দাগ হাতের তালুতেও দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণ দেখলেই বুঝতে হবে লিভারের সমস্যা গুরুতর হয়ে উঠেছে।