ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ছাড়া বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘পরবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের কথা তো পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করলে এবং নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। এই নিয়ে আমরা কোনো কথাই বলতে চাই না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে আমরা নির্বাচনে তো যাবোই না।’
রোববার (৮ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নির্বাচনের বিষয়ে সরকারি দলের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘(নির্বাচনে যাওয়ার) প্রথম শর্ত হচ্ছে যে তাদেরকে (আওয়ামী লীগ) রিজাইন করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারা নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে। সেই নির্বাচন কমিশন যে নির্বাচন আয়োজন করবে তার মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সরকার ও পার্লামেন্ট গঠিত হবে।’
শনিবার আওয়ামী লীগের সভায় সরকার দলীয় নেতারা বলেছেন- বিএনপি না আসলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তারা বলেছেন, বিএনপিকে নিয়ে আমরা নির্বাচন করবো। সেই লক্ষ্যে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনার দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি মনে করি, কোনো কথাই হবে না যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে। এছাড়া কোনো প্রশ্ন ওঠে না।’
দলের সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দেওয়া হবে। এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা একটা মোনাফেক দল এবং তারা এই কথাটা বলতেই থাকে। তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলে- দেখলে মনে হয় যে এদের মতো ভালো মানুষ আর নাই। আর ভেতরে ভেতরে যা করার তা করে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) ভদ্রলোকের মতো কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে। অথচ সভা-সমাবেশ তো দূরের কথা, একটা মিলাদ করতে দেয় না, ঈদ পুনর্মিলনীতে আক্রমণ করে, দোয়া মাহফিলের মধ্যে আক্রমণ করে। এদের কাছ থেকে কী আশা করতে পারেন। সব তো মোনাফেকি।’
দাউদকান্দিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসায় হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই অনির্বাচিত সরকার তাদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করবার জন্যে এখন থেকেই সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল আমাদের স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দাউকান্দিতে তার বাসভবনে গিয়েছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন তিনি। এরপর তিতাসে তার একটি নিমন্ত্রণ ছিল, সেই নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্য যখন বের হন তখন অতর্কিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা লাঠি-সোঠা, ইট-পাটকেল ছুড়ে হামলা করে। ড. মোশাররফের ওপরে ফিজিক্যালি আক্রমণ বলেই আমরা এটাকে মনে করি। আক্রমণটা এত তীব্র ছিল যে, কর্মীরা ড. মোশাররফ হোসেনকে তাকে বাসায় তুলে দেন এবং গেট বন্ধ করে দেন। তারপরও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বৃষ্টির মতো ইট ছুড়তে থাকে, পাথর ছুড়তে থাকে…।’
‘যেহেতু তিনি আমাদের স্থায়ী কমিটির সিনিয়র নেতা, তার ওপরে হামলাকে আমরা মনে করি স্থায়ী কমিটির ওপর হামলা, আমাদের দলের ওপর হামলা। আমরা এটাকে ছোট করে দেখতে পারি না। আওয়ামী লীগের এই হামলায় প্রমাণ হয়েছে যে, তাদের চরিত্রের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। বরং তারা নতুন উদ্যোমে বিএনপি তথা ভিন্নমতকে, বিরোধী দলকে নির্মূল করতে, দমন করতে তারা চরম সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে।’
এ সময় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ওপরে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমকে তারা (আওয়ামী লীগ) নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। আপনারা দেখেছেন যে, সংবাদ মাধ্যমের যে সূচক করা হয় আন্তর্জাতিকভাবে, ফ্রিডম অব প্রেস কতটুকু আছে- সেখানে বাংলাদেশ ১০ ধাপ নেমে গেছে। এর থেকে প্রমাণিত হয় বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে একটা স্বৈরাচারী দেশে পরিণত হয়ে গেছে।’
সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কোনো কর্মসূচি দল থেকে দেওয়া হবে কি না জানতে চাই বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মুভমেন্ট দেখেছেন। এর আগে আমরা প্রায় এক মাস ধরে দ্রব্যমূল্যের প্রতিবাদে আন্দোলন করেছি। অবশ্যই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে করণীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি দেবো।’