# গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের নির্দেশ
# ডিসেম্বরের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সব সহযোগী সংগঠনের কমিটি
# বিদ্রোহীরা পাবে না পদ, থাকলে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ
# বিরোধীপক্ষের কর্মসূচিতে বাধা দেবে না আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ও দলের জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে আটঘাট বাঁধতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এ বছরের শেষ দিকে দলের সম্মেলন এবং আগামী বছরের শেষে বা ২০২৪ সালের শুরুতে সংসদ নির্বাচন ঘিরে এরইমধ্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠন গোছাতে মনোযোগী দলটি। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দলের সব স্তরের নেতাকর্মীদের জাতীয় নির্বাচন ও সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বিরোধীপক্ষকেও মাঠে নামার সমান সুযোগ দেওয়া হবে। কারও নির্বাচনী কর্মসূচিতে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হবে না। তবে সারাদেশে দল গুছিয়ে সম্মেলনের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনেও বিজয় নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগ।

শনিবার (৭ মে) গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা শেষে দলের একাধিক নেতার সঙ্গে  আলাপকালে এমন তথ্যই ওঠে এসেছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আসছে ডিসেম্বরেই আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। এরইমধ্যে দলটির ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র আপডেট করতে বলা হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা-উপজলা শাখা কমিটি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি ডিসেম্বরের মধ্যেই করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

সংগঠন গোছানোর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের জন্য ইশতেহার প্রণয়ণেরও নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে স্ব স্ব এলাকায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে দলের নেতাকর্মীদের পরামর্শ দেন তিনি।

দলটির নেতারা বলছেন, শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হয়ে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টাব্যাপী চলে কার্যনির্বাহী সংসদের এ সভা। এতে সূচনা বক্তব্যের পর সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকদের কাছ থেকে বিভাগীয় রিপোর্ট নেন দলীয় সভাপতি।

তিনি কমিটি করার ক্ষেত্রে ‘মাই ম্যান’ না খুঁজে প্রকৃত ত্যাগী নেতাদের প্রাধান্য দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘মাই ম্যান খুঁজবেন না। মাই ম্যান থাকে না। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরাই থাকবে।

বিদ্রোহীদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ
স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন নির্বাচনে যারা দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে গিয়ে (বিদ্রোহী) নির্বাচন করেছেন, তাদের দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়। বর্তমানে যারা দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে আছে, তাদের সরিয়ে সম্মেলন প্রস্তুতির জন্য কমিটি করতে বলা হয়েছে।

সারাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনের বিষয়েও তদারকি করার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা ও উপজেলায় কমিটি করতে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি আগামী জাতীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সব সহযোগী সংগঠনের কমিটি করতে হবে বলেও বৈঠকে বলা হয়েছে।

সভায় নীলফামারী ও নারায়ণগঞ্জের দুই নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের একজন নীলফামারীর তোফায়েল আহমদকে শোকজও করা হয়েছে।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাউকে হুট করেই বহিষ্কার বা অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। প্রয়োজনে শোকজ করে জবাব আসার পর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

রাজনীতির মাঠে বিরোধী পক্ষ চায় আওয়ামী লীগ
রাজনীতিতে শক্ত বিরোধীপক্ষ চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য বিরোধী শিবিরকেও রাজনীতির মাঠে নামার সুযোগ দিতে চায় দলটি। দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি বা বিরোধী পক্ষের কর্মসূচিতে কোনো বাধা দেওয়া হবে না।

বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতির মাঠে ফের শক্তিশালী বিরোধীদলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আওয়ামী লীগ। একটা অলটারনেটিভ থাকা উচিত। ভালোভাবে যদি তারা সংগঠিত হতে পারে আমাদের আপত্তি নাই। তারা সংগঠিত হোক।

সভার বরাত দিয়ে উপস্থিত দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, সভায় কয়েকটি দিবসের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়েও করার নির্দেশনা দেন দলীয় প্রধান। এ উপলক্ষে দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রচার ও প্রসারে অধিকতর কর্মসূচি গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, নতুন প্রজন্ম যেন আওয়ামী লীগের ইতিহাস জানে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বোঝে সংগঠন করে। খালি ভুলভাল স্লোগান দিল, না জেনেই দল করলো, তাতে লাভ নেই। জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদেরও পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে। চাকুরিতে যোগ্যদের প্রাধান্য দিতে হবে। অযোগ্যদের এনে লাভ নেই, তারা দলের জন্য ক্ষতি বৈ উপকার বয়ে আনতে পারে না।

বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিরোধী দল মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ করুক, আমাদের পক্ষ থেকে বাধা সৃষ্টি করার প্রয়োজন নেই। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। যারা নির্বাচন করবে, তাদের স্বাগতম। নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে।

গণভবনের সামনে ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বৈঠকে আলোচনা হয়েছে মূলত আগামী জাতীয় নির্বাচন ও দলের আসছে জাতীয় সম্মেলন ঘিরে। এখন থেকে দুটোরই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ করতে হবে। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য নারায়ণগঞ্জ ও নীলফামারীর জলঢাকায় দুজন নেতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অব্যাহতি দিয়ে শোকজ করতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা-উপজেলা শাখা সম্মেলন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে সাতটি জেলা ও ৪০টি উপজেলা শাখার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। আগামী নির্বাচন ও জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে সুশৃংখল ও সুসংগঠিত দল হিসেবে দাঁড় করাতে হবে।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, সম্মেলন ডিসেম্বরে হবে আশা করছি। এজন্য গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনী ইশতেহার আপডেট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা শাখা ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন ডিসেম্বরের আগে শেষ করতে হবে।