বরগুনার যাত্রী শিফাত হোসেন। পরিবার নিয়ে ঈদের আগের দিন বাড়ি যান ঈদ করতে। বাড়ি যাওয়ার পথে ভোগান্তি ছিল অনেক। রোববার অফিস খোলা। সেই ভেবে এবার কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন শুক্রবার রাতে। বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছান যথা সময়ে। এসে দেখেন মাত্র ৫টি ফেরি দিয়ে বাংলাবাজার ঘাট চালু রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

ঘাটের দায়িত্বে থাকা পুলিশ তাদের টার্মিনালে ঢুকিয়ে দেন। আর পেছনে সিরিয়াল বাড়তে থাকে। শনিবার সকাল গড়িয়ে দুপুর প্রায় শেষ। কিন্তু শিফাতের প্রাইভেটকারটি আর সামনের দিকে এগোয়নি। শুধু ভিআইপি আর ভিআইপি পরিবহন পার হচ্ছে।

কেবল শিফাতই নয়। এমন অভিযোগ ঘাটে আটকে থাকা শতাধিক প্রাইভেটকারের চালক ও যাত্রীদের। এদের মধ্যে অনেকেই ফেরিঘাটে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন। কিন্তু কোনোভাবেই ফেরি পার হতে পারছেন না। স্বল্প সংখ্যক ফেরি দিয়ে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুট পরিচালনা করার বিষয়টিকে দোষারোপ করছেন ব্যক্তিগত পরিবহনের চালক ও যাত্রীরা।

বরিশালের আরেক যাত্রী আনায়ারুল হক জানান, ফেরি সংখ্যা বাড়াতে না পারলে এই রুটে ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখলেই ভালো হতো। কারণ ফেরি চলার কারণে ভিআইপিরা ঠিকই পার হচ্ছেন। আর সাধারণ জনগণ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। শনিবার সকাল থেকেই শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুট হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের কর্মস্থলমুখো যাত্রীর চাপ শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী চাপও বৃদ্ধি পায়। দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে বিভিন্ন যানবাহনে যাত্রীরা বাংলাবাজার ঘাটে আসেন। বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়াগামী প্রতিটি ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোটই ছিল যাত্রীতে ভরপুর। অল্প সংখ্যক ফেরি চলাচল করায় ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।

এদিকে যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। তবে ঘাট এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিসসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে।

বরিশালের যাত্রী আরাফাত জানান, কর্মস্থলমুখী যানবাহন ও যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিমুলিয়া থেকে খালি লঞ্চ-ফেরি-স্পিডবোট এনে চাপ সামাল দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও মোটরসাইকেলের দীর্ঘ লাইন পড়েছে সকাল থেকেই।

অপরদিকে লোডমার্ক অনুযায়ী লঞ্চগুলো যাত্রী পারাপার করতে পারছে না। দুপুরে বাংলাবাজার ঘাটে লঞ্চের সংখ্যা হঠাৎ কমে যায়। শিমুলিয়া থেকে লঞ্চ আসতে অনেক বিলম্ব হওয়ায় বাংলাবাজার ঘাটে মানুষের প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়। তবে ঘাট এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যাবসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন শৃংখলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছেন।

বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, সীমিত সংখ্যক ফেরি চলাচল করায় ঘাট এলাকায় যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। পারাপারের অপেক্ষায় ঘাট এলাকায় দুই শতাধিক যানবাহনের লাইন সৃষ্টি হয়েছে। ঘাটে তীব্র গরমে দীর্ঘসময় আটকে থেকে নারী, শিশুসহ যাত্রীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ঘাটের ম্যানেজার সালাউদ্দিন জানান, ফেরিগুলোতে সাধারণ যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহন, কাঁচামালবাহী গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। তবে সীমিত সংখ্যক ফেরি চলাচল করায় ঘাট এলাকায় যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। পারাপারের অপেক্ষায় ঘাট এলাকায় দুই শতাধিক যানবাহনের লাইন সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাবাজার ঘাট দিয়ে ৫টি ফেরি, ৮৭টি লঞ্চ ও শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে।