ধীরে ধীরে একবছরের জন্য চলে যাচ্ছে মহিমান্বিত রমজানের পবিত্র দিনগুলো। আজ রমজান মাসের শেষ শুক্রবার। রমজানের শেষ জুমাকে বলা হয় জুমাতুল বিদা। মুসলিম উম্মাহর কাছে এটি একটি পবিত্র দিন। জুমাতুল বিদা রোজাদারকে স্মরণ করিয়ে দেয়, রমজানের শেষলগ্নে এর চেয়ে ভালো কোনো দিন আর পাওয়া যাবে না। সুতরাং এ পুণ্যময় দিনটির যথাযথ সদ্ব্যবহার করা উচিত।

রমজানের শেষ জুমা হিসাবে মুসলিম উম্মাহর কাছে দিনটির বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। জুমার দিনের স্বতন্ত্র ফজিলত অনেক বেশি। রমজানের প্রতিটি জুমা ফজিলত ও তাৎপর্যের দিক থেকে অনন্য।

রমজান ও রোজার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মাঝে তাকওয়া বা খোদাভীতির যোগ্যতা অর্জন করানো। আমরা রমজানে একমাত্র আল্লাহর নির্দেশে দিনে হালাল এবং পবিত্র জিনিসগুলোও বর্জন করেছি, তাহলে ওই আল্লাহর হুকুম অমান্য করে রমজানের বাইরের দিনগুলোয় কীভাবে গুনাহে লিপ্ত হব? আল্লাহকে অসন্তুষ্টকারী কাজকর্ম কেন করে বেড়াব? কেন আমরা মিথ্যা বলবো? কেন আমরা মিথ্যা সাক্ষ্য দেবো? কেন আমরা মানুষের মনে কষ্ট দেবো? কেন অপরের হক নষ্ট করবো? কেন মানুষের অধিকার হরণ করবো? কেন জুলুম করবো? কেন আমরা অন্যায়ভাবে অন্যের রক্ত ঝরাবো? মোটকথা, যত খারাপ বিষয় আছে, যেন সেসব অন্যায় ও গুনাহ থেকে বাঁচার অভ্যাস, ধ্যান-খেয়াল এবং গুরুত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়-এটিই তাকওয়া।

জুমার দিন মুমিন মুসলমানদের ইমানি সম্মেলন হয়। এ দিনের তাৎপর্য বর্ণনা করে বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুমাবার সর্বাধিক মর্যাদাবান ও নেতৃস্থানীয় দিন। এদিনে আদি পিতা হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়। একই দিনে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন। আবার পুনরায় পৃথিবীতে আগমন করেন। এ দিনে তার ইন্তেকাল হয়। এ শুক্রবারেই কেয়ামত সংঘটিত হবে।

এ পুণ্য দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যখন আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুল হয়। (মিশকাত) রমজান মাসের শেষ শুক্রবার হযরত সুলায়মান (আ.) জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন এবং মুসলমানদের প্রথম কিবলা ‘মসজিদ আল-আকসা’ প্রতিষ্ঠা করেন বলে ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়। এ জন্য প্রতি বছর সারা বিশ্বের মুসলমানরা রমজান মাসের শেষ শুক্রবার ‘আল কুদস’ দিবস হিসাবে উদযাপন করেন।

জুমাতুল বিদার বিশাল জামাতে আমাদের দেশের বিভিন্ন মসজিদে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাই ওই দিনের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আর সাধারণ জুমার দিনেই সেখানে নির্দিষ্ট মুহূর্ত যে কোনো দোয়া করা হয়ে থাকে, সেখানে জুমাতুল বিদায় তো এ ফজিলত আরও উন্মুক্ত হওয়াই যুক্তিযুক্ত। রমজান মাসে প্রতিদিন ইফতারপূর্ব সময়ে আল্লাহতায়ালা ৭০ হাজার গুণাহগারকে ক্ষমা করে দেন।

এ হিসাবে সমগ্র রমজানে যেই পরিমাণ গুনাহগারকে ক্ষমা করা হয় শুধু জুমাতুল বিদা তথা আখেরি জুমায় সেই সংখ্যক ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয়। তাই এ দিনে উচিত প্রত্যেক রোজাদার আল্লাহর কাছে প্রাণ খুলে প্রার্থনা করা, ক্ষমা আদায় করা।