রাশিয়ার হামলা ঠেকাতে ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ইউক্রেনকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যে সব দেশ তার প্রথম সারিতেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি। অথচ ‘যথেষ্ট’ সরবরাহ না করার অভিযোগ এনেছে ইউক্রেনসহ একাধিক দেশ। এর মাঝে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সরকার।

জার্মান প্রতিরক্ষা নীতির আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারছেন না বর্তমান চ্যান্সেলর। ফলে ইউক্রেনকে আরও ভারী অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। জার্মানি তথা ন্যাটোকে যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে ফেলতে চান না শলৎস। তাই অস্ত্র সরবরাহের বদলে ইউক্রেনের অস্ত্র কেনার জন্য বিশাল আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি।

দেশটির এমন পরিস্থিতি নিয়ে জার্মানির আইনমন্ত্রী মার্কো বুশমান বলেছেন, ইউক্রেনকে সাঁজোয়া গাড়ির মতো ভারি সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী- সেই পদক্ষেপ মোটেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সমান হবে না। ইউক্রেনের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। ফলে সে দেশকে অস্ত্র সরবরাহ করা আইনসম্মত। তিনি বলেন, এটাই জার্মান সরকারের অবস্থান।

তবে জার্মানির সরকার এখনো এমন ‘সাহসী’ সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বের ঘেরাটোপে থাকলেও সংসদের নিম্নকক্ষে প্রধান বিরোধী ইউনিয়ন শিবির নিজস্ব প্রস্তাব এনে সরকারকে চাপে ফেরতে পারে। রক্ষণশীল সিডিইউ ও সিএসইউ সংসদীয় দলের উপ প্রধান ইওহান ভাডেফুল এক টুইট বার্তায় এ বিষয়ে জার্মান সরকারকে সহায়তার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু শলৎস অস্ত্র সরবরাহের প্রশ্নে অগ্রসর না হলে তিনি নিজস্ব উদ্যোগের ইঙ্গিত দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মতো জার্মানিরও উন্নত অস্ত্র সরবরাহ এবং সেগুলোর ব্যবহার করতে ইউক্রেন সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি। আরও নিরীহ মানুষের হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার আগে শলৎসের অবস্থান বদলানো উচিত বলেও মন্তব্য তার।

সরকারি জোটের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে উদারপন্থি এফডিপি ও পরিবেশবাদী সবুজ দলের কয়েকজন নেতা ইউক্রেনের জন্য আরও সহায়তার পক্ষে মত দিচ্ছেন। সবুজ দলের রাজনীতিক আন্টন হোফরাইটার বলেন, জার্মান সরকার বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করলে ইউক্রেনের এ মুহূর্তে তেমন লাভ হবে না। সে দেশকে দ্রুত প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহ করা উচিত।

যুদ্ধের সময় ট্যাংকের মতো ভারি অস্ত্র সরবরাহের ঝুঁকি নিয়েও সংশয় দেখা দিচ্ছে। সহজেই সেগুলো শনাক্ত করে রাশিয়া সরাসরি হামলা চালাতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো প্রথম দফার ভারি অস্ত্র ইউক্রেন সীমান্তে পৌঁছেছে।