অনাস্থা ভোটে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছেন মুসলিম লীগ (নওয়াজ) নেতা শাহবাজ শরিফ। শিগগির নতুন সরকার ঘোষণা করবেন তিনি। কিন্তু বহু মতের বহুদলীয় জোটে গড়া এই সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ রয়েছে খোদ পাকিস্তানি বিশ্লেষকদেরই। মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডনের অনলাইনে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তেও এ নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য লেখাটির বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হলো-
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের আসন্ন জোট সরকারের কাজ শেষ হয়েছে। নতুন সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে শুরুতেই ভয়ংকর কিছু চ্যালেঞ্জ পাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ও দেশের কিছু অংশে জঙ্গিবাদের পুনরুত্থান।
এর চেয়েও বড় কথা, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে বিরোধ থাকা বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত ক্ষমতাসীন জোট আগামী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত টিকবে কি না, সে বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই। তারা হয়তো ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার সাধারণ লক্ষ্য অর্জন করেছে, কিন্তু তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা কী?
পিটিআই জাতীয় পরিষদ থেকে বেরিয়ে গেছে এবং আগাম নির্বাচনের জন্য তার উত্তরসূরীদের ওপর জনসাধারণের শক্তিশালী চাপ তৈরির প্রতিজ্ঞা করেছে। ফলে নতুন প্রশাসনের জন্য এই যাত্রা খুব একটা মসৃণ হবে না।
ইমরানকে হটিয়ে ক্ষমতায় শাহবাজ-বিলওয়ালের জোট।
শাহবাজ শরিফের মন্ত্রিসভার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সম্ভবত পাকিস্তানের ভেঙে পড়া অর্থনীতি ঠিক করা এবং তার উচিত এটিকে এজেন্ডার শীর্ষে রাখা। পিটিআই উত্তরাধিকার সূত্রে একটি দরিদ্র অর্থনীতি পেয়েছিল, যাকে তারা আরও খারাপ অবস্থায় ফেলেছে; সাধারণ মানুষ উচ্চতর ডাবল-ডিজিট মূল্যস্ফীতির মুখে পড়েছে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো কমে যাওয়ার পাশাপাশি তারা বেতন ও চাকরি হারানোর সমস্যায় ভুগছে।
করোনাকালীন সংক্ষিপ্ত বিরতির পর অর্থপ্রদানের ভারসাম্য সংকট এরই মধ্যে ফিরে এসেছে। কারণ, দেশে অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অতিপ্রয়োজনীয় বহুপাক্ষিক সহায়তা আটকে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্য, বিশেষ করে খাদ্য ও অপরিশোধিত তেলের বাড়তি দাম দুর্বল বাহ্যিক খাতের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দরকার কঠিন সিদ্ধান্ত। যেমন- বিদ্যুৎ ও পেট্রোলিয়ামের দামের ওপর সীমাবদ্ধতা অবিলম্বে অপসারণ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে নতুন ঋণ নিয়ে আলোচনা করা। এটি যদি অসম্ভব না-ও হয়, তবু যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক মেরামত না করলে তা কঠিনই হবে।
ক্ষমতাসীন জোট কি পারবে রাজনৈতিকভাবে অজনপ্রিয় কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এসব সিদ্ধান্ত নিতে? নতুন নির্বাচন খুব বেশি দূরে নয়। তার ওপর ইমরান খানের দল পিটিআই নতুন সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপের পর্যালোচনা ও সমালোচনা করবে।
পাকিস্তানে ইমরান সমর্থকদের বিক্ষোভ।
শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরপরই পার্লামেন্টের বক্তৃতায় সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন ১০ শতাংশ বাড়ানো এবং গম-আটায় ভর্তুকি দেওয়ার মতো জনপন্থি ঘোষণা তার ওপর মারাত্মক চাপেরই ইঙ্গিত দেয়। একদিকে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা নিষিদ্ধ করা, অন্যদিকে জনগণের উচ্চ প্রত্যাশা- জোট সরকার ও তার নেতার সামনে খুব বেশি বিকল্প নেই, অন্তত এই মুহূর্তে। তাদের একাধিক সংকট মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হতে হচ্ছে।
পাকিস্তানে অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক নীতির চ্যালেঞ্জের বিশালতা একটি শক্তিশালী সরকারের দাবি করে, যার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় জর্জরিত নয় এবং কঠোর ও অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষেত্রে জনসমর্থন রয়েছে। এ অবস্থায় বুদ্ধিমানের কাজ হবে নির্বাচনী আইন সংস্কার করা ও শিগগির নতুন নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া।