বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েই চলছে। ফলে হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীর চাপ। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৩টি শয্যার জায়গায় তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি আছেন। চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য মতে, গত মাসে হাসপাতালের ডায়রিয়া বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা মার্চের তুলনায় চার গুণ বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২১ জন। হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ১৩টি।
শনিবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর বেশিরভাগই শিশু। শয্যা কম থাকায় মেঝেতেই চাদর বিছিয়ে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের সিঁড়ির পাশে জেনারেটর সামনে মেঝেতে বিছানা পেতেছেন বরগুনা সদর উপজেলার কুমরাখালী এলাকার পারুল (৩৪)। শয্যা সংকটে মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাকে। তার হাতে পুশ করা স্যালাইনের ব্যাগ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বিদ্যুতের মেইন সুইচের সঙ্গে।
পারুল বলেন, ‘দ্যাশের এত উন্নতি অয় আর মোগো হাসপাতালের অয় খালি অবনতি। এইহানে থাকলে মোর অসুখ আরো বাড়বে।’
বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের পারভীন (৩০)। তারও ঠাঁই হয়েছে নিচতলার মেঝেতে চলার পথে। তার বিছানার বিপরীতেই রয়েছে দুটি টয়লেট। এ টয়লেটের নোংরা পানি মেঝে গড়িয়ে প্রায় বিছানা পর্যন্ত পৌঁছেছে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও কয়েকজন রোগী ও রোগীর স্বজনরা জানান, প্রথমে ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে এসে ভর্তি হন তারা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় বাড়িতেই ডায়রিয়ার রোগী আছে। যার মধ্যে অনেকেই যাতায়াত ব্যবস্থার সমস্যার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসতে পারেননি।
ছোট বদরখালী এলাকার রিয়াজ বলেন, গত বুধবার বাচ্চা ভর্তি করিয়েছিলাম। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি। এরকম পরিবেশে থাকলে সুস্থ হওয়া সম্ভাবনা দেখছি না।
গৌরিচন্না এলাকার নাসির বলেন, কোনোমতে হাটার জায়গায় বিছানা পেতেছি। স্যালাইন লাগাতে হয়েছে রেলিংয়ে ঝুলিয়ে। এভাবে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না, আমরা গরীব মানুষ যাবো কই?
বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সভাপতি হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, চিকিৎসক সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে রোগীরা সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন। তাই চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনে আলাদা বেডের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (আবাসিক) সোহরাব উদ্দীন বলেন, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নেই, নেই বেড। এ অবস্থায় হঠাৎ বিপুল সংখ্যক রোগী ভর্তি হওয়ায় হিমশিম খাচ্ছি। এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে দু-একদিনেই প্রয়োজনীয় ওষুধপথ্যের সংকট দেখা দেবে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোগীদের সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করতে।
বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না শতভাগ বিশুদ্ধ পানি মানুষকে দেওয়া যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত ডায়রিয়া থেকে রেহাই নেই।