চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে জেটি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। আমদানি করা জ্বালানি তেলের বিদেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং নিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। খালাসের অপেক্ষায় দিনের পর দিন জেটিতে অপেক্ষা করছে একাধিক বিদেশি জাহাজ। জেটি সংকটের কারণে খালাসে ধীরগতি দেখা দেওয়ায় বাড়ছে জাহাজজট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অবস্থায় কয়েক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ গুনতে হতে পারে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটিকে।

দীর্ঘদিন মেরামত না করায় ‘ডলফিন-৬’ নামের জেটিতে জাহাজ হ্যান্ডলিং এখন বন্ধ। এ কারণে জ্বালানি তেল খালাসে জটিলতা আরও ঘনীভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিপিসি। তবে জেটির সংস্কারকাজ শিগগির শেষ হবে বলে আশা সংস্থার কর্মকর্তাদের।

জানা গেছে, শুধুমাত্র জেটি সংকটের কারণে ডিজেল নিয়ে আসা দুটি বিদেশি জাহাজের একটি গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে খালাসের অপেক্ষায়। অপরটিও গত ২৫ মার্চ থেকে অপেক্ষমান। এ অবস্থায় জাহাজপ্রতি বিপিসির দৈনিক ক্ষতিপূরণ গুনতে হচ্ছে ১০-১২ হাজার ডলার। অন্যদিকে তেল খালাসে ধীরগতির পরিপ্রেক্ষিতে আমদানির জ্বালানি তেল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী নতুন জাহাজের জটও বাড়ছে।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, পুরোনো জেটি ভেঙে বিপিসির অর্থায়নে ২০০৫ সালে নির্মাণ করা হয় দুটি ডলফিন জেটি। এর মধ্যে ‘ডলফিন-৫’ জেটি মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং ‘ডলফিন-৬’ জেটি ব্যবহার করে পদ্মা অয়েল কোম্পানি। দুটি জেটি দিয়েই আমদানি করা পরিশোধিত জ্বালানি তেল খালাস করা হয়। অন্যদিকে ইস্টার্ন রিফাইনারির মালিকানাধীন ডলফিন-৭ জেটি আমদানি করা ক্রুড অয়েলের জাহাজ হ্যান্ডলিং কাজে ব্যবহার হয়। রক্ষণাবেক্ষণ জটিলতার কারণে গত বছরের জুলাই থেকে পদ্মা অয়েলের ডলফিন-৬ জেটিতে বিদেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং বন্ধ রয়েছে।

বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, ডলফিন-৬ জেটিটি মেরামতের জন্য খুলনা শিপইয়ার্ডকে দায়িত্ব দেয় বিপিসি। কিন্তু নানা জটিলতায় জেটির সংস্কারকাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়। অন্যদিকে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের প্রধান স্থাপনার ডলফিন-৫ জেটিটি গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর আমদানি করা ডিজেল খালাসের জন্য আসা ‘এমটি গ্রান্ড এইচ-৮’ জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে অভ্যন্তরীণ লাইনগুলো দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে প্রথম পর্যায়ে বিদেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হলেও পরবর্তীকালে জেটিটির তেল খালাসের পাইপলাইনগুলো মেরামত করে কোনোরকমে খালাস কার্যক্রম চালু রাখা হয়। কিন্তু তাতে খালাস কার্যক্রম পুরোদমে চালু করা সম্ভব হয়নি।

সরেজমিনে বন্দর এলাকা ঘুরে জানা গেছে, বর্তমানে একটি মাত্র জেটি দিয়ে স্বাভাবিক খালাস কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় গত ৭ থেকে ১৪ দিন ধরে পতেঙ্গা জেটিতে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে আমদানির ডিজেল নিয়ে আসা দুটি জাহাজ। এর মধ্যে ‘এমটি জেনিনস বে’ ৩৩ হাজার ৫৭৩ টন ডিজেল নিয়ে গত ১৮ মার্চ পতেঙ্গা জেটিতে আসে। ‘এমটি আটলান্টিক লিলি’ জাহাজটি একই জেটিতে আসে গত ২৫ মার্চ। জেটি খালি না হওয়ায় মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) পর্যন্ত জাহাজ দুটি খালাসের অপেক্ষা রয়েছে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  বলেন, জ্বালানি তেল নিয়ে আসা বিদেশি জাহাজ নির্ধারিত সময়ে খালাস করতে ব্যর্থ হলে বিপিসিকে ডেমারেজ (ক্ষতিপূরণ) গুণতে হয়। একেকটি জাহাজে দিনে ১০-১২ হাজার ডলারের বেশি ক্ষতিপূরণ আসে। দুটি জাহাজ দিনের পর দিন জেটিতে খালাসের অপেক্ষয় থাকার কারণে বিপিসিকে বাংলাদেশি মুদ্রায় কয়েক কোটি টাকা ডেমারেজ দিতে হতে পারে।

এ বিষয়ে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামের দাপ্তরিক মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বিপিসির পরিচালক (বিপণন, অপারেশন ও পরিকল্পনা) খালিদ আহমেদ মঙ্গলবার সন্ধ্যায়  বলেছেন, ডলফিন-৬ জেটির মেরামত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসেই এ জেটিটি দিয়ে জাহাজ হ্যান্ডলিং করা যাবে।

খালাসে দেরি হওয়ায় বিদেশি জাহাজের ডেমারেজ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কী পরিমাণ ডেমারেজ আসবে তা হিসাব না করে বলা যাবে না।