ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা একটি যাত্রীবোঝাই নৌকা ডুবে প্রায় একশ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)। খবর এএফপির।
সংস্থাটি জানিয়েছে, আলেগ্রিয়া-১ নামের একটি বাণিজ্যিক ট্যাঙ্কার শনিবার (২ এপ্রিল) ভোরে ভূমধ্যসাগরে ভাসতে থাকা একটি লাইফ ভেলা থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করেছে।
আলেগ্রিয়া-১ এর বরাত দিয়ে এক টুইট বার্তায় এমএসএফ জানিয়েছে, উদ্ধারকৃত চারজন প্রায় একশ লোকের সঙ্গে একটি নৌকায় কমপক্ষে চারদিন সমুদ্রে ভাসছিলো। আলেগ্রিয়া-১ ট্যাঙ্কারের লগবুক অনুযায়ী এই নৌকাডুবির ঘটনায় প্রায় ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এমএসএফ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসা ও সুরক্ষা প্রয়োজন। লিবিয়া নিরাপদ দেশ নয় মন্তব্য করে দাতব্য সংস্থাটি বলেছে, দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া অভিবাসীদের এমন জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না যেখানে তারা আটক, নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের সম্মুখীন হবে।
গত এক দশকের সংঘাত ও অরাজকতায় জর্জরিত লিবিয়া এখন আফ্রিকান ও এশীয় অভিবাসীদের জন্য ইউরোপে পৌঁছানোর মরিয়া প্রচেষ্টার একটি মূল যাত্রাবিন্দু হয়ে উঠেছে। এসব অভিবাসীরা প্রায়শই লিবিয়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।
লিবিয়া থেকে সমুদ্রযাত্রায় অনুপযোগী ও যাত্রীবোঝাই উত্তরাভিমুখী জাহাজগুলো অধিকাংশ সময়ই ডুবে যায় কিংবা সমস্যায় পড়ে। আবার, এসব অভিবাসীরা ফিরে আসার পর, অনেকে আটক কেন্দ্রে আরও ভয়ঙ্কর নির্যাতনের সম্মুখীন হয়।
এদিকে, রোববার (৩ এপ্রিল) জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার- ইউএনএইচসিআর’র প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে টুইট করেছেন। তিনি বলেন, ভূমধ্যসাগরীয় আরেকটি ট্র্যাজেডিতে ৯০ জনেরও বেশি লোক মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, ইউরোপ উদারতার সহিত ইউক্রেন থেকে ৪০ লাখ শরণার্থীকে কার্যকরভাবে আশ্রয় দিয়ে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। এখন যদি অন্যান্য দেশের উদ্বাস্তু ও অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ইউরোপে ঢুকতে চায়, তাহলে সেটি কিভাবে তাদের গ্রহণ করবে? বর্তমান সংকটাবস্থায় এটি জরুরিভাবে বিবেচনা করা উচিৎ।
সর্বশেষ এই ট্র্যাজেডির আগে, ইউএনএইচসিআর এ বছর ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় ৩৬৭ জনের মৃত্যু রেকর্ড করেছে। ২০২১ সালে এই ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৮ টি।
ইউরোপীয় উপকূলে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা কমাতে লিবিয়ার কোস্ট গার্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কড়া সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এরপরও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।