জন্মের পর প্রায় ১৩ মাসে একটি শব্দও বলতে পারেননি রুমা আক্তার (৩৮)। ইশারা করে কোনোকিছু বোঝাতেও পারতেন না তিনি। একসময় পরিবারের সদস্যদের আর বুঝতে বাকি রইল না যে রুমা একজন অটিজম শিশু। দিন যত গড়াতে থাকে রুমার মধ্যে অটিজমের লক্ষণ ততই ফুটে ওঠে। অনেকেই তাকে বাঁকা চোখে দেখেছেন। তবে সহমর্মিতাও দেখিয়েছেন অনেকে।
রুমার হাত অনেকটাই অকার্যকর। ফলে চাইলেও খুব ভারী কোনো জিনিস তিনি তুলতে পারেন না। নিজের শরীরের যত্নের বিষয়েও নেই ধারণা। এ কারণে পরিবারের সহায়তা নিয়েই বেড়ে উঠতে হয়েছে তাকে।
রুমার বাবা আবুল হোসেন বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই রুমা অটিজম শিশু। সে নিজের যত্ন নিতে পারে না। পুরোটাই আমাদের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে তার বয়স ৩৮ হলেও মানসিকভাবে সে এখনও ৫ বছরের শিশুর মতো। রুমাকে নিয়ে অনেকেই নানা কথা বলেছেন। সামাজিকভাবেও অনেকসময় নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবুও সন্তানকে নিজের মতো করেই লালন-পালন করছি। এক্ষেত্রে অনেকের সহযোগিতাও পেয়েছি।’
সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমান ২৫ লাখ ২২ হাজার ৯২৬ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন। যাদের মধ্যে ৬৬ হাজার ২১৯ জন রয়েছেন অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। এরমধ্যে পুরুষ ৪০ হাজার ৫৩৭ জন, নারী ২৫ হাজার ৬১৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ৬৩ জন অটিজম রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের সব প্রতিবন্ধীকে এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। শনাক্ত করতে ২৮ ধরনের তথ্য দিতে হয়। এরপর সেটিকে যাচাই-বাছাই করে চিকিৎসক যখন সার্টিফিকেট দেন তখন তার নাম এন্ট্রি হয় এবং তাকে একটি কার্ড দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করে একটি আইডি নাম্বারও দেওয়া হয়। গ্রামে বা বিভিন্ন জায়গায় বসবাসরত সবাইকে তো সেভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। যাদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে তাদের যাচাই-বাছাই করে শনাক্ত করা যাচ্ছে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নাকি অটিজম সেটা চিহ্নিত করাও আরেক সমস্যা। এগুলো যথাযথ চিহ্নিত করতে না পারলে চিকিৎসায় ভুল হওয়ার সম্ভবাবনা থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের এতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুণ বেশি। সাধারণত শিশুর বয়স তিন বছর হওয়ার আগেই (অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১৮ মাস থেকে ৩৮ মাস বয়সের মধ্যেই) অটিজমের লক্ষণ প্রকাশ পায়। ফলে ওই শিশুর সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে অসুবিধা হয়। এছাড়া আশেপাশের পরিবেশ ও ব্যক্তির সঙ্গে মৌলিক ও ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে যোগাযোগে সমস্যা হয় এবং আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়।
অটিজম আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালের ২ এপ্রিলকে ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে প্রতি বছর ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন করা হচ্ছে। অটিজম বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও অবদান রাখতে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে অটিজম পদক প্রদান করা হয় এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে লিফলেট, পোস্টার, ব্রুশিয়ার ও দৈনিক পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস ও সেরিব্রাল পালসি দিবসসহ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়।
প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায় নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সুরক্ষা ট্রাস্ট
বাংলাদেশের সংবিধানে সব নাগরিকের সম অধিকার, মর্যাদা, মৌলিক মানবাধিকার ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার ব্যক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘের সনদ অনুসমর্থন ও অনুস্বাক্ষর করেছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, আন্তর্জাতিক সনদের বাস্তবায়ন ও প্রতিবন্ধীবান্ধব সরকারের সদিচ্ছায় অটিজমসহ স্নায়ুবিকাশজনিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে ২০১৩ সালে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন প্রণয়ন করা হয়। এ আইন অনুসারে ২০১৪ সালে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এই ট্রাস্ট।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কার্যক্রম
২০১৭-১৮ অর্থবছর হতে এ কার্যক্রম শুরু হয় এবং চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরে এক হাজার ৬৫০ জন এনডিডি ব্যক্তিকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত অনুদান প্রদানের পরিমাণ চার কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এ প্রকল্পে উপকারভোগী পাঁচ হাজার ৭০১ জন।
এনডিডি ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট ও বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে একটি স্বাস্থ্য বিমা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে সাধারণ বিমা করপোরেশন ও এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। চলতি বছরের ১ মার্চ জাতীয় বিমা দিবসে এনডিডি ব্যক্তিদের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বিমা’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিমার আওতায় বাৎসরিক ৬০০ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে এক লাখ টাকার বিমা কাভারেজ পাওয়া যাবে।
দেশের সব হাসপাতালে এনডিডি ব্যক্তিদের ওয়ানস্টপ স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পরিচালক/তত্ত্বাবধায়ককে প্রধান করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি ওয়ানস্টপ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শিক্ষা সম্পর্কিত কার্যক্রম
এনডিডি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি নমনীয়ভাবে মূলধারার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি ও সমন্বিতভাবে উপযোগী শিক্ষা প্রদান অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে সরকার ‘প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা, ২০১৯’ প্রণয়ন করে। নীতিমালা অনুযায়ী এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বিদ্যালয় পরিচালনার বিধান রয়েছে। স্কুলগুলো এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টের আওতায় ন্যস্ত করা আবশ্যক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এনডিডি শিক্ষার্থীদের উপযোগী শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে বিশেষ কারিকুলাম প্রণয়ন কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রম
২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭০ জন এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু/ব্যক্তি ও তাদের পিতা-মাতা/অভিভাবককে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে দেশব্যাপী অনলাইন ভিত্তিক প্রশিক্ষণ চালু রাখা হয়েছে। শুরু থেকে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত ৫৫টি জেলার ২১০টি উপজেলার ৪৬০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ২০২০-২১ অর্থবছর হতে এনডিডি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত ৬০টি জেলার ১০৫টি উপজেলার ১১৫টি বিদ্যালয়ের ৪৫০ জন শিক্ষককে এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
উদ্ভাবনী কার্যক্রম ও ই-সেবা সমূহ
‘স্মার্ট অটিজম বার্তা’ নামে অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এটি কমিউনিটি ভিত্তিক ইন্টারেক্টিভ স্ক্রিনিং টুল (মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন)। এর মাধ্যমে কোনো শিশুর অটিজম আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহ থাকলে তা নিরূপণ করা যাবে। একই সঙ্গে সে তথ্য নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স/শিশু বিকাশ কেন্দ্র অথবা অটিজম সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে।
এছাড়াও এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টের আওতায় ‘বলতে চাই’ নামে একটি অ্যাপ চালু করা হয়েছে। মোবাইল/ট্যাব ব্যবহার করে ওই অ্যাপের মাধ্যমে অমৌখিক যোগাযোগ প্রযুক্তিকে ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব।
অটিজমসহ এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে অ্যাপ্লিকেশন বেইজড ই-সার্ভিস কানেক্টিভিটির আওতায় চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নানাবিধ সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ৮৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আইসিটি বিভাগ, এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট এবং ই-জেনারেশনের মধ্যে এ সংক্রান্ত এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
জাতীয় কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন
‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন, ২০১৩’ এর ১৭ ধারা এবং ন্যাশনাল স্ট্রাটেজিক অ্যাকশন প্ল্যান ২০১৬-২০৩০ এর আলোকে এনডিডি সম্পর্কিত কাজ বাস্তবায়নের জন্য ‘অটিজম ও এনডিডি সেবা কেন্দ্র’ শীর্ষক প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় স্নায়ুবিক সমস্যাগ্রস্ত চার ধরনের প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তিকে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিমের মাধ্যমে অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি, ফিজিও থেরাপি, শারীরিক- মানসিক এবং সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলিং, স্বাস্থ্যবিষয়ক সেবা ও পরামর্শ প্রদান, সহায়ক উপকরণ ও সহায়ক প্রযুক্তিভিত্তিক থেরাপিসহ বিভিন্ন ধরনের থেরাপি সেবা প্রদান করা হবে। এছাড়াও সামাজিক পুনর্বাসন ও অন্যান্য দপ্তর/সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ১৬টি বিভিন্ন ধরনের সেবা এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেওয়া হবে।
জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প: আটটি বিভাগীয় শহরে আবাসন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, কর্মসংস্থানের জন্য ‘সক্ষম’ প্রকল্প, অটিজম ও এনডিডি শিক্ষা উপকরণ ও থেরাপি সহায়ক উপকরণ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও কারখানা স্থাপন ও বিতরণ শীর্ষক প্রকল্প, শহর ও পল্লী এলাকার অটিজম ও এনডিডি শিশুর বয়সচক্র ভিত্তিক সমস্যা ও অগ্রগতি পরিমাপন বিষয়ক গবেষণা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
জিওবি এবং এনজিওর অংশীদারত্বের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প
অটিজম, এনডিডি ও অন্যান্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মনোসামাজিক শক্তি বৃদ্ধি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্প, তীব্র মাত্রার অটিজম ও এনডিডি ব্যক্তির গৃহভিত্তিক পিতা/মাতা/অভিভাবকের প্রশিক্ষণ ও পিতা/মাতা ও অভিভাবকের কর্মসংস্থান বাস্তবায়ন শীর্ষক প্রকল্প, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মাধ্যমে শপিংমল পরিচালনা করে কর্মসংস্থান বাস্তবায়ন শীর্ষক প্রকল্প, অটিজম ও এনডিডিসহ প্রতিবন্ধীদের সেবা প্রদানকারী কেয়ার গিভার এবং পেশাজীবীদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প।
সংকলন এবং নির্দেশিক প্রণয়ন ও বিতরণ
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিদ্যমান আইন, বিধি ও সরকারি আদেশ-নির্দেশনা সমূহের সংকলন, সংগঠন নিবন্ধন নির্দেশিকা এবং অভিভাবক নিবন্ধন নির্দেশিকা প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্টদের বিতরণ করা হয়েছে।
এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট কর্তৃক প্রামাণ্য চিত্র তৈরি ও এনডিডি নিয়ে সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার ও ভুল ধারণা দূরীকরণ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে টিভিসি প্রণয়ন ও প্রচার করা হচ্ছে। বিগত বছরসমূহে ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে প্রণীত ডকুমেন্টারি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
এনডিডি শিশু/ব্যক্তিদের পুনর্বাসন
অটিজম ও এনডিডি ব্যক্তিদের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে বগুড়ায় ৫০ জন পুরুষ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫০ জন এনডিডি নারী শিশু/ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠানিক পুনর্বাসন করা হবে। এ লক্ষ্যে অচিরেই দুটি কেন্দ্র চালু করা হবে। এর মধ্যেমে এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্বাসন কাজের সূচনা হবে।
এনডিডি শিশু ও ব্যক্তিদের প্রতিভা ও মেধা বিকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে চিত্রাংকন, রচনা প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. আনোয়ার উল্লাহ বলেন, এটা অস্বীকার করার সুযোগে নেই যে বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কিছু ভালো স্কুল চলছে। এখানে দুটো কারণ আছে। মানুষ আগে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের ঘর থেকে বের করতো না, এখন ঘর থেকে বের করছে। ওইসব শিশুদের মা-বাবাও বুঝতে পেরেছেন এদেরকে চিকিৎসা করে নিরাময় করা সম্ভব। এদের শিক্ষার জন্য গ্রামে ও শহরে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও হয়েছে। অভিভাবকদের মধ্যেও সচেতনতা বেড়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের শুধু সরকারিভাবেই কাজ হচ্ছে তা নয়, বেসরকারি উদ্যোগেও বেশ কিছু কার্যক্রম চলছে। বেসরকারি দাতা সংস্থা, ওয়েলফেয়ারে বাংলাদেশের অনেক ব্যক্তি সহায়তা করছেন। অটিজমদের জন্য কাজের ক্ষেত্রে যদি ৯০ ভাগ কাজের কথা বলি- এর মধ্যে ৬০ ভাগ সরকার করছে। বাকি কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা।
ড. মো. আনোয়ার উল্লাহ আরও বলেন, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে অটিজম-বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা চার লাখ ৪৬ হাজার। এটা হলো শনাক্ত করা হয়েছে যাদের তাদের হিসাব। শনাক্তের বাইরেও অনেকে রয়েছে। ১৭ কোটির মধ্যে ১০০ জনে একজন ধরলেও প্রায় ১৭ লাখ কোনো না কোনোভাবে অটিজমের মধ্যে আছে। সবাইকে এখনও শনাক্ত করতে পারিনি। অটিজম ব্যক্তির পরিবারকে ব্যাংক ঋণের কোনো সুযোগ নেই। তবে তাদের ভাতা দেওয়া হয়, কিন্তু সেটি খুবই কম। ৭৫০ টাকা দিয়ে এ ধরনের শিশুর হয় না। দেখা যায় তাদের এক সপ্তাহের ওষুধের খরচ এর চেয়ে বেশি। এখন সুরক্ষা বিমা চালু হয়েছে। সেখানে ৬০০ টাকা প্রিমিয়াম দিলেই এক লাখ টাকার কাভারেজ পাবে। হাসপাতালে ভর্তি হলে ৭০ হাজার টাকা, ভর্তি না হলে ৩০ হাজার টাকার বেনিফিট পাবে। আমরা এককালীন কিছু সাপোর্ট করছি। যারা অস্বচ্ছল কিন্তু ব্যয়বহুল চিকিৎসা লাগে তাদেরকে ১০ হাজার টাকা করে বছরে দিচ্ছি। ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা দিয়েছি।