সংবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী সরকারগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেওয়ার জন্য বিচারপতিদের সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘উচ্চ আদালত রায় দিয়ে এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত করে দিয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনে আধুনিক ও নান্দনিক ১২তলা ‘বিজয়-৭১ ভবন’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে এ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী ‘আমরা যারা আপনজন হারিয়েছিলাম, আমাদের কোনো অধিকার ছিল না বিচার চাওয়ার। এমনকি আমি বাংলাদেশে ফিরে এসে মামলা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মামলা করতে দেওয়া হয়নি। কারণ ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে খুনিদের।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিচারহীনতার একটি সংস্কৃতি দেশে চালু করা হয়েছিল। সে অবস্থার একমাত্র পরিবর্তন করতে পেরেছি, যখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকারে এসেছি তখন। সেখানে অনেক বাধা, অনেক কিছুই আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিম্নআদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা বিচারহীনতা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে পেয়েছি।’

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার বিচার বিভাগের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ করেছে এবং বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিচার বিভাগকে আরো শক্তিশালী করতে এবং সংবিধানের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর প্রতিটি দেশের উচ্চ আদালতই নিজ নিজ দেশের সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে। আমাদের সুপ্রিম কোর্টও এর ব্যতিক্রম নয়। এর ইমারতগুলো কেবল বিচারের চিরায়ত পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্যের প্রতীকই নয়, সেগুলোর প্রতিটি ইট-পাথরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অসংখ্য আইন ও সাংবিধানিক ইতিহাস। আমাদের পুরাতন হাইকোর্ট ভবন ও প্রধান ভবনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। আজ যে বিজয় ৭১ ভবনটি হলো এটাতেও সুপ্রিম কোর্টের স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করা হয়েছে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচারকরা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন সততা, মেধা ও শ্রম দিয়ে মামলার জট কমিয়ে দুর্দশাগ্রস্ত বিচার প্রার্থীদের যত দ্রুত সম্ভব ন্যায়বিচার দিয়ে বাড়ি ফেরাতে। আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থী মানুষের দুর্দশার সুযোগ নেওয়াকে বরদাশত করা হবে না।’

সভাপতিত্ব করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। এছাড়া স্বাগত বক্তৃতা করেন আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার। এসময় সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স এক্সটেনশন (বর্ধিত) ভবন নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৫৮ কোটি চার লাখ ২২ হাজার টাকা। যার পুরোটাই বহন করছে সরকার। এনেক্স ভবনের পশ্চিম পাশে ১৮ হাজার ১৩৪ বর্গমিটার জায়গায় নির্মিত হলো এ ভবন।

এতে রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, বিচারপতিদের জন্য ৫৬টি চেম্বার, ৩২টি এজলাসকক্ষ (কোর্ট রুম), আলাদা দুটি লিফট, আধুনিক জেনারেটর ও দোতলা বিদ্যুতের সাব-স্টেশন। এছাড়া এ ভবনে ৩২টি ডিভিশন বেঞ্চ ও বিচারপতিদের চেম্বার ছাড়াও ২০টি অফিসকক্ষ এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের দাপ্তরিক কক্ষ রয়েছে।