রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার সমস্যা কখনো কখনো মারাত্মক আকার ধারণ করে। রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের নীচে নেমে যাওয়াকেই রক্ত স্বল্পতা বলা হয়।

ব্যক্তি বিশেষে আলাদা হলেও শরীরে স্বাভাবিকভাবে রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ হলো- পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৩.৮ থেকে ১৭.২ গ্রাম বা ডেসিলিটার। অন্যদিকে নারীদের ১২.১ থেকে ১৫.১ গ্রাম বা ডেসিলিটার।

হিমোগ্লোবিন কী?

হিমোগ্লোবিন আসলে লাল রক্ত কণিকায় থাকা একটি প্রোটিন। এর কাজ শরীরের কোষ ও টিস্যুতে অক্সিজেন বহন করা। হিমোগ্লোবিন স্বল্পমাত্রাকে বলা হয় হিমোগ্লোবিনের অভাব। রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে এটি সহজেই নির্ণয় করা যায়।

হিমোগ্লোবিনের অভাবের লক্ষণ কী কী?

সাধারণত হিমোগ্লোবিনের সংখ্যা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য কমে যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তা টের পান না। তবে এটি বেশি কমে গেলে দেখা দেয় বিভিন্ন উপসর্গ-

>> ক্লান্তি
>> দূর্বলতা
>> মাথা ঘোরা
>> বুক ধড়ফড়ানি
>> ফ্যাকাসে চামড়া
>> শ্বাসকষ্ট
>> শক্তি হারানো
>> ফ্যাকাশে ত্বক ও নখ
>> চুল পড়া
>> হাঁটতে কষ্ট
>> পায়ের পাতা ফোলা ইত্যাদি।

এর প্রধান কারণগুলো কী কী?

>> আঘাতের কারণে অত্যাধিক রক্তপাত
>> ঘনঘন রক্তদান
>> মাসিকে অত্যাধিক রক্তপাত
>> স্প্লিন বা প্লীহার বেড়ে যাওয়া
>> অ্যানিমিয়া
>> কোষের ব্যাধি কিংবা
>> থ্যালাসেমিয়া।

অন্যান্য যেসব কারণে লাল রক্ত কণিকা পর্যাপ্ত মাত্রায় তৈরি হতে পারে না বলে হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দেয়, তা হলো-

>> ভিটামিন বি ১২ কম পরিমাণে গ্রহণ
>> হাড়ের মজ্জার অসুখ (কারণ লাল রক্ত কণিকা হাড়ের মজ্জাতে তৈরি হয়।
>> অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া
>> হাড়ের মজ্জার ক্যানসার, যার ফলে নতুন কণিকা অথবা কোষ তৈরির ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
>> কিডনির অসুখ
>> খাদ্যে আয়রন ও ফোলেটের কম মাত্রা

এটি কীভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?

হিমোগ্লোবিনের স্বল্প মাত্রা সাধারণ রক্ত পরীক্ষা মাধ্যমেই শনাক্ত ও নির্ণয় করা যায়। আবার কী কারণে হিমোগ্লেবিনের অভাব দেখা দিয়েছে, তার ওপরও নির্ভর করে হিমোগ্লোবিনের স্বল্প মাত্রার চিকিৎসা।

অ্যানিমিয়া অথবা অপুষ্টির ক্ষেত্রে চিকিৎসক খাদ্যের সম্পূরক দিতে পারেন, যা রক্তে আয়রন, ভিটামিন বি ১২ অথবা ফোলেটের মাত্রা বাড়ায়। কোনো আঘাতের কারণে রক্তক্ষয় হলে ব্লাড ট্রান্সফিউশন বা রক্ত পরিব্যাপ্তির দরকার হতে পারে।

প্রতিরোধে করণীয়

শরীরে লৌহের ঘাটতি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে লোহা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। লৌহসমৃদ্ধ খাবার যেমন- মুরগির মেটে, ঝিনুক, ডিম, আপেল, বেদানা, ডালিম, তরমুজ, কুমড়ার বিচি, খেজুর, জলপাই, কিশমিশ ইত্যাদি রাখুন খাদ্যতালিকায়। এর পাশাপাশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।