ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের এক মাস পার হয়েছে গত ২৪ মার্চ। ইউক্রেন সেনারা এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রুশ সেনাদের সঙ্গে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যেমন হার মানতে রাজি নন, তেমনি পুতিন সরকারও যুদ্ধ থামাতে নারাজ। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তরফে জানানো হয়, ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রথম পর্ব অনেকাংশেই শেষ। এখন পূর্ব ইউক্রেইনের ডনবাস অঞ্চল পুরোপুরি ‘মুক্ত’ করার দিকে নজর থাকবে রাশিয়ার।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা অব্যাহত থাকায় বহু স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। বেসামরিক লোক হতাহতের পাশপাশি দেশ ছাড়েন প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশের পর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভোরে স্থল, আকাশ ও জলপথে ইউক্রেনে হামলা শুরু করেন রাশিয়ার সেনারা। উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে, এমনকি বেলারুশ থেকেও হামলা চালানো শুরু হয়। ধীরে ধীরে রাজধানী কিয়েভের দিকে অগ্রসর হয় রুশ সেনারা। টানা এক মাস ধরে যুদ্ধ চললেও এখনো বড় কোনো শহর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেই রাশিয়ার।
সম্প্রতি পূর্ব ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর নির্দেশের আগে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পুতিন ইউক্রেনকে রাশিয়ার ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, পূর্ব ইউক্রেন এক সময় রাশিয়ার ভূমি ছিল। পুতিনের এ ঘোষণার পর শুরু হয় ইউক্রেন আগ্রাসন।
রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর একের পর নিষেধাজ্ঞা আসতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের কাছ থেকে। আন্তর্জাতিক সুরক্ষিত অর্থ লেনদেন নেটওয়ার্ক সুইফট থেকে বাদ পড়ে রাশিয়া। ইউক্রেন আগ্রাসনের পর বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেল ও ভোগ্যপণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। খোদ রাশিয়াতেও বেড়েছে সব পণ্যের দাম।
এদিকে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বড় কয়েকটি শহর। বন্দরনগরী মারিউপোলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন অনেক মানুষ। কোনো কোনে শহরে জারি আছে কারফিউ।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা সম্প্রতি শান্তি আলোচনার জন্য বসেছিলেন বেলারুশ সীমান্তে। কয়েক দফায় বৈঠক হলেও বেসামরিক লোকদের সরানোর জন্য মানবিক করিডোর চালু করা হলেও যুদ্ধের পথ থেকে পিছপা হননি কোনো পক্ষই। রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে চীনের সঙ্গে দেশটির বন্ধুদের সমীকরণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাদের মধ্যে বন্ধুত্বও যুক্তরাষ্ট্রের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ইউক্রেন ইস্যুতে ত্রি-দেশীয় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।