মসৃণ সেগুন কাঠ দিয়ে তৈরি দৃষ্টিনন্দন জিপ গাড়ি। ৯ ফুট দৈর্ঘ্য আর ৫ ফুট প্রস্থের এ গাড়ি চলবে সোলার প্যানেলে। চালানো যাবে বৈদ্যুতিক চার্জেও। পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী এ গাড়িটি তৈরিতে খরচ হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। একবার চার্জে চলবে ১০০ কিলৈামিটার। যার গতি হবে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় সোলার ও বিদ্যুৎচালিত পরিবেশবান্ধব এই কাঠের গাড়িটি তৈরি করেছেন বুলবুল ও ইমরানুল নামে দুই ভাই। দৃষ্টিনন্দন গাড়িটি এরইমধ্যে সীমিত পরিসরে চলাচল করছে। তরুণ দুই ভাইয়ের তৈরি গাড়িটি দেখতে ভিড় করছেন এলাকাবাসী।
পাকুন্দিয়া উপজেলা সদরের হাপানিয়া গ্রামের এমদাদুল হক ও সুফিয়া খাতুনের দুই ছেলে মো. এনামুলক হক বুলবুল ও মো. ইমরানুল হক। তাদের মধ্যে সর্বদা কাজ করে নুতন আবিষ্কারের নেশা। পরিবেশসম্মত আর কম জ্বালানির যানবাহন তৈরির চিন্তা থেকে তারা কাঠ দিয়ে তৈরি করেছেন দৃষ্টিনন্দন এই জিপ গাড়ি। বৈদ্যুতিক চার্জ ও সোলার প্যানেলের মাধ্যমে এটি চলাচল করবে। তবে এখনও সোলার প্যানেল বসানোর কাজ শেষ হয়নি। সীমিত পরিসরে চলাচল করছ ইলেকট্রিক চার্জে।
এরইমধ্যে তরুণ দুই ভাইয়ের উদ্ভাবিত কাঠের গাড়িটির ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। খোঁজ-খবর নিতে তাদের বাড়িতে ছুটছেন সংবাদকর্মীরাও।
এলাকার অনেকে জানান, গাড়িটি দেখতে খুব সুন্দর। ভালো মানের সেগুন কাঠ দিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। চালকসহ সামনে দু’টি আসন আর পেছনে তিনটি আসন।
সাধারণ মানুষ বলছেন, এ গাড়িটি আরামদায়ক। কম খরচে যাতায়াতের জন্য এটি হতে পারে আদর্শ। বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরু হলে কম দামে কাঠের গাড়িটি কিনতে পারবেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
জানা গেছে, যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র ৩ মাসের চেষ্টায় সৌরবিদ্যুৎ চালিত গাড়িটি তৈরি করেন তরুণ উদ্ভাবক এনামুল হক ও তার ছোট ভাই ইমরানুল হক। নতুন কিছু করার আগ্রহ থেকে পরিবেশবান্ধব চার চাকার ও পাঁচ আসনবিশিষ্ট এই জিপ গাড়িটি তৈরি করেন তারা। গাড়িটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি ও চলাচলে প্রশাসনের সহযোগিতাও চেয়েছেন তারা।
এনামুল হক বলেন, অনেকদিন থেকেই চিন্তা করছিলাম, কিভাবে কাঠ দিয়ে সৌরবিদ্যুৎচালিত গাড়ি তৈরি করা যায়। সেই চিন্তা থেকেই এ গাড়িটি তৈরি করি। এক মাস ধরে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চালাচ্ছি। কোনো সমস্যা হয়নি। সরকারি সহযোগিতা পেলে শিগগিরই গাড়িটি বাজারে নিয়ে আসতে পারবো।
ছোট ভাই মো. ইমরানুল হক বলেন, আমাদের আবিষ্কৃত গাড়িটি কম খরচে চালানো যাবে। পেট্রোলচালিত একটি গাড়ি এক হাজার কিলোমিটার চালাতে ৫ হাজারেরও বেশি টাকা খরচ হয়। এর বিপরীত আমাদের গাড়িটি সমান দূরত্ব অতিক্রম করবে মাত্র ১২৫০ টাকায়। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করবে না। এই ধারণা থেকেই অমরা কাঠের গাড়িটি তৈরি করি।
কিছুদিন আগে উপজেলা বিজ্ঞান মেলায় দুই ভাইয়ের তৈরি গাড়িটি প্রথম স্থান অর্জন করে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আবদুল আজিজ আকন্দ বলেন, তরুণ উদ্যোক্তা দুই ভাইয়ের উদ্ভাবিত এ যানটি মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে তাদের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজলিন শহীদ চৌধুরী জানান, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর চাপ কমাতে জ্বালানি সাশ্রয়ী এই গাড়িটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এটি একটি অসাধারণ উদ্ভাবন। যদিও এটি পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর্যায়ে আছে। আমাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের গাড়ি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি ও বাজারজাতকরণে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।