দু’পাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে প্রায় দুই যুগ পর গত বছর ফেরি সার্ভিস চালু হয় আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে। কিন্তু একবছরেও এই রুটে সেবার মান বাড়েনি। ফলে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। আগের চেয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নেমে এসেছে অর্ধেকে। বর্তমানে ফেরি সংকটের কারণে পারাপারে বেড়েছে চরম দুর্ভোগ।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, মানিকগঞ্জের আরিচা থেকে ফেরিঘাট পাটুরিয়ায় স্থানান্তর করার পর থেকেই আরিচা ঘাটটি কার্যত অচল হয়ে পড়ে। একই অবস্থা কাজীরহাট প্রান্তেরও। এই রুটে ফেরি সার্ভিস পুনরায় চালুর জন্য দুই পাড়ের মানুষ দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছিল। এরই প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় ফেরি চলাচল শুরু হয়। নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এই সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

শুরুতে রোকেয়া ও সুফিয়া নামে দুটি নতুন মাঝারি ফেরি দিয়ে পারাপার শুরু হয়। দীর্ঘদিন পর ফেরিঘাট চালু হওয়ায় নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছিলো নদীর দুই পাড়ের মানুষ। যাতায়াত সুবিধাসহ দুই প্রান্তের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটারও আশা ছিল তাদের মনে।

বঙ্গবন্ধু সেতুর বিকল্প হিসেবে আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলার সঙ্গে রাজধানীর দূরত্ব কমেছে প্রায় ৯০ কিলোমিটার। যাতায়াতে সময় ও খরচ কম লাগায় এই রুটটি শুরুর দিকে বেশ জনপ্রিয় ওঠে। নতুন ফেরির কারণে অল্প সময়ে স্বাচ্ছন্দ্যে নদী পার হতে পেরেছেন যাত্রীরা। কিন্তু কয়েক মাস আগে এই রুটে চলাচলকারী নতুন ফেরি দুটি শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে তিনটি পুরাতন ফেরি। যার মধ্যে দুটি একেবারেই লক্কর ঝক্কড়। প্রায়ই বিকল থাকে। পারাপারে সময়ও লাগে বেশি। সার্বক্ষণিক ফেরির ব্যবস্থা না থাকায় এক বছরেও এই রুটে শুরু হয়নি বাস চলাচল।

আরিচা ফেরিঘাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবু হোসেন জানান, ঘাটে সব অচল ফেরি। দেখা যায় এক ট্রিপ দিয়েই ফেরি নষ্ট। যাত্রীরা টিকিট কেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। পরে বাধ্য হয়ে লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে পার হয়। গাড়ি এসে বসে থাকে। এজন্য মানুষ এই রুটে আসতে চায় না। অথচ ঘাট চালু হওয়ার পর অনেক যাত্রী আসতো। একটা জমজমাট ভাব ছিলো। কিন্তু আগের মতো ঘাট আবার মরে যাচ্ছে। আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যও নাই।

আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই রুট জমজমাট করতে হলে ভালো ফেরির কোনো বিকল্প নেই। ভালো মানের ফেরি দিতে হবে। একইসঙ্গে যাত্রীরা যাতে বিশ্রাম নিতে পারেন, ফেরিতে বসে যেতে পারেন সেই ব্যবস্থা থাকতে হবে। বর্তমানে যে ফেরিগুলো চলছে তার দুটিতে যাত্রীদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। পুরো পথ দাঁড়িয়ে যেতে হয়। নেই টয়লেটও। তাই যারা একবার এই পথে আসেন তারা দ্বিতীয়বার আর আসতে চান না।

মিজানুর রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, আরিচা থেকে কাজীরহাট পারাপারে ফেরি ভাড়া মাত্র ২৫ টাকা। আর স্পিডবোটে ৩০০ টাকা, লঞ্চে ৭০ টাকা এবং ট্রলারে ভাড়া ১০০ টাকা। ভাড়া কম এবং নিরাপদ যাতায়াতের জন্যই বেশিরভাগ মানুষ ফেরিতে যেতে চান। কিন্তু ঘাট থেকে একটি ফেরি ছেড়ে গেলে আরেকটি ফেরির জন্য দুই-তিন ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়। অনেক সময় ঘাটে ফেরি থাকলেও, যাত্রী ও যানবাহনের অপেক্ষায় থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মানুষের দুর্ভোগ আর ভোগান্তি কমাতে এই রুটের পুরাতন ফেরি সরিয়ে নতুন ফেরি যুক্ত করা এবং ফেরি সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার মো. আবু আব্দুল্লাহ  জানান, দুই পাড়ে দুটি ঘাট আর দুটি নতুন ফেরি দিয়ে নৌ-রুটটি চালু করা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন ফেরি দুটি শিমুলিয়া রুটে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে একটি ডাম্পসহ কদম ও কবতী নামে তিনটি ফেরি চলাচল করছে। এই ফেরিগুলোতে পারাপারে সময় বেশি লাগায় যাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ কমে যাচ্ছে। তবে দুই পাড়ে নতুন দুটি ঘাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ফেরি সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে। আশা করি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের ডিজিএম মো. খালেদ নেওয়াজ জানান, আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে রো রো ফেরি চলাচলের জন্য পন্টুন ছিলো না। বর্তমানে দুই ঘাটে নতুন দুটি পন্টুন নির্মাণ করা হচ্ছে। পন্টুন নির্মাণ শেষ হলে প্রয়োজনে সেখানে দুটি রো রো ফেরি দেওয়া হবে।