টিনের শেড দেওয়া শেষ। পেছনের অংশ ঘেরার কাজও হয়ে গেছে। মেঝেতে ইট বসিয়ে চলছে সিমেন্ট-বালুর অস্থায়ী ঢালাই। বাকি শুধু তিনদিকে বাঁশ, কাঠ ও স্টিলের ফ্রেম দিয়ে ঘেরার কাজ। সেই বাঁশ-কাঠ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নিয়ে সাতসকালে কাজ শুরু করেছেন শ্রমিকরা।
কাজ দেখভাল করছেন এক ব্যক্তি। তিনি একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্মচারী। তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আরে মিয়া, দ্রুত করেন। হাতে আছে মাত্র তিনদিন। উদ্বোধনের দিন যাতে স্টল খোলা যায়, সেই ব্যবস্থা করে দিতেই হবে।’
জবাবে বয়স্ক একজন শ্রমিক জানালেন, ‘চিন্তা কইরেন না বস, ইনশাআল্লাহ উদ্বোধনের আগেই স্টল রেডি (প্রস্তুত) কইরা দিমু।’
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। অমর একুশে বইমেলার জন্য স্টল নির্মাণের কাজ চলছে সেখানে।
শুধু এ স্টলটি নয়, আশপাশে তাকালে চোখে পড়ছে অসংখ্য স্টল নির্মাণকাজ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। দ্রুত স্টল নির্মাণের কাজ শেষ করতে শ্রমিকদের তাগাদা দিচ্ছেন প্রকাশনা সংস্থার লোকজন।
জানা গেছে, প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা শুরু হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে মেলা শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি বইমেলার উদ্বোধন করবেন। এবারের বইমেলায় ৪৬১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। বরাবরের মতো এবারও বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেলার মাত্র তিনদিন বাকি থাকলেও অধিকাংশ স্টলের নির্মাণকাজও শেষ হয়নি। বিশেষ করে যারা ইট, বালু, সিমেন্ট এবং স্টিলের ফ্রেম দিয়ে স্টল করছেন, তাদের নির্মাণকাজ সিংহভাগই বাকি।
প্রকাশনা সংস্থাগুলো বলছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মেলা দুই সপ্তাহ পিছিয়ে যাওয়ায় সবাই অপ্রস্তুত ছিল। অনেকে ভেবেছিলেন, হয়তো মেলা আরও পেছাবে। তবে দু-সপ্তাহ পর মেলা শুরুর অনুমতি পাওয়ার পর তারা কাজ শুরু করেছেন। তবে উদ্বোধনী দিনের মধ্যে কাজ শেষ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার বইমেলায় কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীই কেবল স্টলে কাজ করতে পারবেন। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে বাংলা একাডেমি ও মেলায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারি রাখবে।
প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে বইমেলা। তবে দর্শনার্থীরা রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন এবং রাত ৯টায় মেলার আলোকবাতি বন্ধ করে দেওয়া হবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারসহ অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে মেলা বেলা ১১টা শুরু হবে। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে মেলা।
২০২১ সালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা আয়োজন করতে পারেনি বাংলা একাডেমি। ওই বছর মেলা শুরু হয় ১৮ মার্চ। বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছিল এই বইমেলা। পরে সরকার দ্বিতীয় দফায় বিধিনিষেধ জারি করলে মেলার সময়সীমা কমিয়ে বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা করা হয়। পরে আবার মেলা চালানো হয় দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
