সম্প্রতি ঢাকার কলাবাগানে তেঁতুল মাঠ নামে একটি মাঠ কে কলাবাগান থানা করার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরপর থেকেই কলাবাগান ও ধানমন্ডি আশেপাশের মানুষরা সবাই মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ করছেন। এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সরকারকে অনুরোধ করেছেন যেন মাঠটি কোনভাবেই যেন শিশুদের জন্য বন্ধ করা না হয়। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের অন্যতম ইয়ুথ অর্গানাইজেশন বাংলাদেশ ইয়ুথ ক্লাব “বিওআইসি” এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির উপদেষ্টা সদস্য মাহমুদুল হাসান শিশির এর কাছ থেকে আমরা জানতে চাই খেলার মাঠ বন্ধ করে এমন “উন্নয়ন” বিষয়ে সরকারের কি এই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হচ্ছে কিনা?

এমন সমসাময়িক বিষয় জানতে সংযুক্ত থাকুন নবদেশ পত্রিকার সাথে।

নবদেশ : কেমন আছেন ? আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য।

শিশির : আমি ভালো আছি এবং আপনাদেরও অসংখ্য ধন্যবাদ।

নবদেশ : প্রথমত আমরা জানতে চাচ্ছিলাম, এই যে দেশের সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন খেলার মাঠ দখল করে উচ্চবিত্তদের জন্য ক্লাব অথবা কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের খেলাধুলা স্থান। এ বিষয়ে আপনার কি কোন মতামত আছে? সেইটা জানতে চাচ্ছিলাম।

শিশির : প্রথমত হচ্ছে যে আমাদের সমাজের যেসব উচ্চবিত্তদের সন্তানরা হচ্ছে যেকোন ভালো জায়গায় তারা খেলাধুলা বা অনুশীলন করতে পারছে। টাকা দিয়ে করতে হয় বা মেম্বারশিপ নিতে হয়। যেমন ধরেন আবহনী মাঠের কথাই বলি ওইখানে যারা খেলে বা খেলতে যায় তারা কিন্তু মোটামুটি সবাই উচ্চবিত্ত বা মোটামুটি সামর্থ্যবান। কিন্তু আমরা যদি লক্ষ্য করি এসব মাঠের আশেপাশে থাকে বিশেষ করে যারা সুবিধাবঞ্চিত শিশু আছে, তারা কিন্তু মেধা বিকাশের জন্য উচ্চবিত্তদের ছেলেমেয়েরা যেমন খেলাধুলা বা শরীর চর্চার মাধ্যমে নিজেদের শারীরিক ও মানসিকভাবে মেধা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে সেটা কিন্তু সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েরা বা সাধারণ মানুষ তাদের সন্তানরা এই সুযোগটা পাবে না। তো এই জায়গাটা থেকে আমার মন্তব্য হচ্ছে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেয়া সরকারের পুরোপুরি অযৌক্তিক। এই সিদ্ধান্ত নেয়াটা সম্পূর্ণভাবে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কারণ যদি আমরা এই সুবিধা বঞ্চিত হতদরিদ্র অথবা সাধারণ মানুষ যারা মধ্যবিত্তদের সন্তানদের এই খেলাধুলা করতে সুযোগ না করে দেই তাহলে দেখা যাবে তারা বিভিন্ন খারাপ অভ্যাসে জড়াবে বা নেশাগ্রস্ত হয়ে যাবে। তারা কিন্তু আগামীতে দেশের সম্পদ এই শিশুরাই কিন্তু দেশকে একদিন পরিচালনা করবে, বড় বড় পর্যায়ে যাবে এরা আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ, আমরা যদি তাদেরকে সুন্দর একটি সুযোগ না করে দেই তাহলে তারা অন্ধকারের দিকে ধাবিত হবে এবং তারা তাদের মেধা বিকাশ করতে পারবেনা। তাদের মেধা অনেক সংকীর্ণ হয়ে যাবে। তো এসব ব্যাপার গুলো আসলে চিন্তা করে আমার কাছে মনে হয় সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাঠ গুলো বন্ধ করে দেয়ার আমাদের দেশের জন্য, আমাদের সমাজের জন্য, আমাদের যুবসমাজের জন্য কোনোভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত আমি মনে করি। আমার মতে মানববন্ধন যেটা হয়েছে সেটা আমি যৌক্তিক মনে করি। সরকারের কাছে বিনীত ভাবে অনুরোধ করতে চাই যেই পদক্ষেপ তারা নিচ্ছে সেটা যেন বহাল না রাখে, যেন পরিবর্তিত হয়। আমাদের সন্তানরা, আমাদের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে যেন তারা সিদ্ধান্ত পাল্টায় এই অনুরোধ থাকবে সরকারের কাছে।

নবদেশ : আপনিতো একটি যুব সংগঠন, বাংলাদেশ ইয়ুথ ক্লাব “বিওআইসি” সংগঠনটির‌ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি উপদেষ্টা সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। তো আপনাদের যে স্কুলটি আছে “স্বপ্ন‌স্কুল” সেখানে যেসব সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা আছেন তাদের জন্য খেলাধুলা,শরীরচর্চা, মেধা বিকাশের জন্য কি ধরনের পদক্ষেপ আপনারা নিয়েছেন একটু সংক্ষিপ্ত করে যদি বলতেন??

শিশির : স্কুলের আশেপাশে খেলার কোন মাঠ নেই কিন্তু স্কুলের পাশে অনেক খালি জায়গা আছে। এখন পর্যন্ত কোন দালান হয়নি, সেখানে আমাদের স্কুলের শিশুরা খেলাধূলা করছে আপাতত। আমরা আসলে ওই জায়গায় যারা ডেভলপাররা আছেন বা বিল্ডিং করছেন তাদেরকে অনুরোধ করছি যেন তারা একটি খেলার মাঠ রেখে দালান বা তাদের বিল্ডিং গুলো তোলে সম্মিলিতভাবে। চেষ্টা করছি যেন তারা আমাদের অনুরোধ রাখে এবং সরকারিভাবেও যেন সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি এলাকাতে খেলার মাঠ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় সেই কার্যক্রম আমরা পরিচালনা করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে।

নবদেশ : শিশির আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাথে আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য এবং সেইসাথে আপনাদের সাধুবাদ জানাই যে উদ্যোগটি আপনারা নিয়েছেন। শুভকামনা রইল স্বপ্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য, সেই সাথে সকল সামাজিক কর্মকান্ডের জন্য‌। আপনারা এগিয়ে গেলেই দেশ এগিয়ে যাবে।

শিশির : আপনাকেও ধন্যবাদ এবং নবদেশ পরিবারকেও ধন্যবাদ জানাই আমাকে এ বিষয়টি নিয়ে বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। অনেক অনেক শুভকামনা ও শুভেচ্ছা নবদেশ পত্রিকার জন্য।