পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতিসংঘের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান গুমের তালিকায় যে লোকজনের নাম দিয়েছিল, তাদের অনেকের ভূমধ্যসাগরে সলিলসমাধি হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি আসল কারণ নয়। বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। তাই অনেক দেশ গুমের প্রসঙ্গটি সামনে এনে চাপ প্রয়োগ করে স্বার্থ হাসিল করতে চায়। রাজধানীর একটি হোটেলে শনিবার এক আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।

চলতি মাসে জাতিসংঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের গুমের প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসার কথা রয়েছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘ নয়, জাতিসংঘের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের একটি তালিকা দিয়েছিল। পরে দেখা গেল, অনেক লোকের ভূমধ্যসাগরে সলিলসমাধি হয়েছে। বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তারা (জাতিসংঘের কমিটি) প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাদের নিজেদের কোনো গবেষণা নেই। খুবই পক্ষপাতিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানের তথ্য দিয়ে তারা (জাতিসংঘের কমিটি) বলল, ‘আপনার দেশে অতজন লোক (গুম হয়েছে)। তারপর কিছু লোকের নাম দিয়েছেন। নাম দেওয়ার পর দেখা গেল, আমাদের লোকজন দুয়েকজন ছাড়া ওই তালিকার কাউকেই চেনেন না। আপনারা তাদের নাম জানেন।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গুম হওয়া লোকজনের বিষয়ে তথ্য নিতে পুলিশ তাদের পরিবারের কাছে দু-একবার গেছে। পুলিশের ধারণা, দিনের বেলায় তারা থাকবেন না, তাই রাতের বেলায় গেছে। তখন তারা অভিযোগ করেছেন যে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশ জানতে চায়, তাদের পরিবারের সদস্য কবে, কোথায়, কেন গেছেন, কিছু জানেন কি না। কারণ, অনেকেই আবার ফেরত চলে আসেন। দু-একদিন এ রকম করার পর তারা অভিযোগ করলেন।

গুমের অভিযোগ সম্পর্কে পুলিশের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের (গুম হওয়া লোকজনের পরিবারের সদস্যদের) একটি আলোচনায় রাখার জন্য বলেছি, সেখানে সংবাদকর্মীরাও থাকবেন। ওনারা তখন বলবেন যে তাদের পরিবারের সদস্যদের কবে কোথায় কীভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিংবা ফেরত এসেছেন কি না।’

‘কিছু কিছু দুর্ঘটনার’ খবর পাওয়া যায় না উল্লেখ করে সাম্প্রতিক একটি ঘটনার উদাহরণ টানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যেমন আমরা অনেকদিন ধরে জানি, হারিছ সাহেব (বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী) গুম হয়ে গিয়েছিলেন। এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স (জোরপূর্বক অন্তর্ধান)। এখন দেখি, না, তিনি দেশেই ছিলেন এবং দেশেই নাকি মারা গেছেন। তার মেয়ে বলেছেন। আমরা একসময় দেখলাম, একজন নেতা তিনি দেশে নেই, তারপর ভারতের হোটেলে ভারতীয়রা তাকে ধরল। ওইসব গুম-খুন বলা হয়, কতটুকু সত্য, তা আমরা ঠিক জানি না।’

দেশে একটা লোকও গুম বা খুনের শিকার হোক, সরকার তা চায় না উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স শব্দই তো নেই। আমরা চাই না, কাউকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা চাই, প্রত্যেকের আইনের মাধ্যমে বিচার হবে।’

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘যেহেতু আমরা রাজনৈতিক-কৌশলগত খুব ভালো অবস্থানে আছি। আমাদের আশপাশের বড় বড় দেশ এবং আমাদের সমুদ্রে অবাধে যাতায়াতের বিষয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন। সেজন্য এখন আমরা সবার চক্ষুশূল। আসল উদ্দেশ্য কিন্তু মানবাধিকার নয়, গুম-খুনও নয়। আসল উদ্দেশ্য, এসব চাপ দিয়ে কিছু ফায়দা সংগ্রহ করা যায় কি না।’ এগুলো অপপ্রচার কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই এগুলো অপপ্রচার।