ক্যানসারের বিভিন্ন লক্ষণ সামান্য ভেবে অনেকেই তা অবহেলা করেন। আর এ কারণে প্রাথমিকভাবে ক্যানসার শনাক্তে দেরি হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে পুরো শরীরে। এ কারণে ক্যানসারের কিছু সাধারণ লক্ষণ সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে রাখা ভালো।
আজ বিশ্ব ক্যানসার দিবস। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো মারাত্মক ও প্রাণঘাতী এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। এমনকি ক্যানসার আক্রান্তদের সাহায্য করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করে। বিশেষ করে সাড়ে ১০ কোটি নারী ব্রেস্ট ক্যানসার আক্রান্ত হন। চিকিৎসকরা মনে করেন, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে।
সেক্ষেত্রে চিকিৎসা সহজ হয়। ক্যানসারের লক্ষণগুলো নির্ভর করে ক্যানসারটি কোথায়, এটি কতটা বড় এবং এটি কাছাকাছি কোনো অঙ্গ বা টিস্যুকে কতটা প্রভাবিত করে। ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
এ কারণে সাধারণ কিছু শারীরিক সমস্যাও হতে পারে ক্যানসারের মারাত্মক লক্ষণ। অনেকেই জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, পেটে ব্যথা, ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়াসহ বেশ কিছু শারীরিক সমস্যাকে অবহেলা করেন। তবে এসব সমস্যাও কারণ হতে পারে ক্যানসারের।
তাই প্রয়োজন আরও সতর্কতা ও সচেতনতার। তাহলে কঠিন রোগও সহজে প্রতিরোধ করা যায়। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক কোন ক্যানসারের আগাম লক্ষণ কোনটি-
> বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ফুসফুসে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই ক্যানসারের খুবই সাধারণ ও অবহেলিত উপসর্গ হলো কাশি। শুধু ধূমপায়ী নন, অন্যদেরও এ লক্ষণ দেখা দেয়।
একই সঙ্গে হাঁপানি, কাঁধে বা বুকে গ্যাস্ট্রিকের মতো ব্যথাও ফুসফুস সংক্রমণের লক্ষণ। পাশাপাশি রক্ত কাশিও হতে পারে। যা ক্যন্সারের মারাত্মক লক্ষণ। এমনটি দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
> প্রতিবছর বিশ্বের লাখ লাখ নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এক্ষেত্রে স্তনে ব্যথা, স্তনবৃন্ত পরিবর্তনের মতো সমস্যা প্রকাশ পায়।
এ ছাড়াও স্তন থেকে কোনো তরল পদার্থ বের হওয়া কিংবা ক্ষত ইত্যাদি দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। তিনি পরীক্ষা করবেন ও একটি ম্যামোগ্রাম, এমআরআই বা বায়োপসি করার সুপারিশ দেবেন।
> পেলভিক বা নারীর জননাঙ্গের ক্যানসারের উপসর্গগুলো বেশ সাধারণ। এ কারণে অনেক রোগীই প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগ শনাক্ত করতে পারেন না।
পেট ফুলে থাকা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাসহ, ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, পিঠে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে পরীক্ষা করে দেখুন।
> ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, নতুন দাগ কিংবা ফুসকুড়ি ত্বকে দেখলে সতর্ক থাকুন। কারণ ত্বকের ক্যানসারের ক্ষেত্রে হঠাৎই কোনো দাগ, ফুসকুড়ি, ব্যথাহীন লাল বা বেগুনি রঙা পিণ্ড কিংবা ক্ষত দেখা দিতে পারে। এমন কিছু ত্বকে দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
> বয়স বাড়তেই পুরুষের মধ্যে দেখা দিতে পারে মূত্রনালীর সমস্যা। প্রসাবে জ্বালা-পোড়া, ঘন ঘন প্রসাব হওয়া ইত্যাদি মূত্রনালীর সমস্যার সাধারণ লক্ষণ।
তবে এই সমস্যাগুলো অবহেলা করলেই বিপদে পড়বেন। কারণ এর থেকেই হতে পারে প্রোস্টেট ক্যানসার। এই ক্যানসারে আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা বিশ্বব্যিাপী কম নয়।
> জ্বর কিন্তু বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে প্রকাশ পায়। দীর্ঘদিন ধরে জ্বরে ভোগা রক্তের ক্যানসারের কারণ হতে পারে যেমন- লিউকেমিয়া বা লিম্ফোমা।
> প্রায়ই বদহজমে ভুগলে সাধারণভাবে নেবেন না। কারণ পেটের ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ এটি।
> পাইলস বা কোলন ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে রক্তাক্ত মল। এ ছাড়াও রক্তাক্ত মল স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। তাই এমনটি দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
> ঠিক একইসঙ্গে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত দেখা দেওয়া হতে পারে মূত্রনালীর সংক্রমণ, কিডনি ও মূত্রাশয়ের ক্যানসারের কারণ।
> অণ্ডকোষে ব্যথাহীন ফোলাভাব বা মাংসপিণ্ডও কিন্তু টেস্টিকুলার ক্যানসারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। তাই পুরুষরা যদি অণ্ডকোষের মধ্যে ফোলাভাব দেখতে পান তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
> অনেকেরই খাবার গিলতে সমস্যা হয়। এটি কিন্তু সাধারণ কোনো সমস্যা নয়। দীর্ঘদিন এ সমস্যায় দেখা দিলে তা হতে পারে কণ্ঠনালীর ক্যানসার।
এর পাশাপাশি ঠান্ডা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কিংবা কাশি হতে পারে এই ক্যানসারের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে চিকিৎসক বেরিয়াম এক্স-রে করার পরামর্শ দেবেন।
> পিরিয়ড ছাড়াই যদি নারীর অধিক রক্তপাতের লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে তা হতে পারে চিন্তার কারণ। জরায়ু বা যোনি ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে এটি।
> মুখের ঘা নিয়ে অনেকেই অবহেলা করেন। তবে দীর্ঘদিন এ সমস্যায় ভুগলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ এটি হতে পারে মুখের ক্যানসারের লক্ষণ।
বিশেষ করে যদি আপনি ধূমপান করেন তাহলে এমন ঘা অবহেলা করবেন না। একই সঙ্গে যদি চোয়াল নাড়তে সমস্যা হয় বা মুখে ব্যথা ও দুর্গন্ধ হয় তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
> শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য অনেকেই ডায়েট বা শরীরচর্চা করেন। তবে এসব না করেই হঠাৎ যদি শরীরের ওজন কমতে শুরু করে তাহলে কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয়।
কারণ এটি অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, খাদ্যনালী, ফুসফুসসহ বিভিন্ন ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
> পরিশ্রম করলে শরীরে ক্লান্তি আসা স্বাভাবিক। তবে কোনো কারণ ছাড়াই যদি দিন দিন শরীরে ক্লান্তিভাব বাড়তে থাকে তাহলে বুঝতে হবে নিশ্চয়ই শরীরের বাসা বেঁধেছে কঠিন কোনো রোগ।
জানেন কি, লিউকেমিয়ার মতো ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হলো ক্লান্তি। এ ছাড়াও কোলন বা পেটের ক্যানসারের রোগীরাও খুব ক্লান্ত বোধ করেন।