সারাদেশে বর্তমানে মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ চলছে। গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি মাস জুড়ে দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশ ঊর্ধ্বমুখী। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টানা পাঁচ থেকে সাত সপ্তাহ সংক্রমণ বাড়ার পর তা ক্রমেই নিম্নমুখী হতে থাকে। সে হিসেবে দেশে সপ্তাহখানেক পর সংক্রমণ কমতে পারে।
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশের সরকারি ও বেসরকারি ৮৬৭টি (আরটি-পিসিআর, জিন এক্সপার্ট এবং র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট) ল্যাবরেটরিতে করোনা শনাক্তে ৬ লাখ ২ হাজার ৭৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯ হাজার ২৫৫ জন রোগী শনাক্ত হয়। এছাড়া একই সময়ে ৯১ জন রোগীর মৃত্যু হয়।
এর পরের মাস অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৪টি নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ১৩ হাজার ২৯৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। একই সময়ে মৃত্যু হয় ৩২২ জনের।
এভাবে করোনার সংক্রমণ অব্যাহতভাবে বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর পাশাপাশি সভা-সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতি আর কতদিন থাকবে, সংক্রমণ কি আরও বাড়বে নাকি ধীরে ধীরে কমে যাবে কিংবা মৃত্যু কমবে কি না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব সংক্রামক ব্যাধি দ্রুতগতিতে ছড়ায়, নির্দিষ্ট সময় পর সে ব্যাধির সংক্রমণ দ্রুত কমতে থাকে। করোনার ক্ষেত্রে বিশেষ করে বর্তমান ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে, শুরু থেকে পাঁচ-সাত সপ্তাহ বাড়ার পর সংক্রমণ ক্রমেই কমতে থাকে। সে হিসেবে আগামী এক সপ্তাহ থেকে দিন দশেক পর দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে- টানা পাঁচ থেকে সাত সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। সে হিসেবে দেশে ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারি মাস জুড়ে সংক্রমণ বেড়েছে। এখনো তা অব্যাহত আছে।
আগামী এক সপ্তাহ পর থেকে করোনার সংক্রমণ কমা শুরু হতে পারে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংক্রমণ বাড়ায় মানুষের মধ্যে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সচেতনতা আগের তুলনায় বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার পাশাপাশি দেশের ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে দ্রুত টিকার আওতায় আনা গেলে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব হবে।
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মুশতাক হোসেনও একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, যেসব সংক্রামক ব্যাধি খুব দ্রুত ছড়ায় সেগুলো যেমন দ্রুত ওঠে আবার দ্রুত নেমে যায়। আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে পরীক্ষা কম হচ্ছে। তাই করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণ চলছে কি না বোঝা যাচ্ছে না। আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ করোনার সংক্রমণ কমতে শুরু করবে বলে তিনিও অনুমান করছেন।
দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সর্বমোট ১ কোটি ২৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৭৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৮ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ৪২৫ জনের মৃত্যু হয়। একই সময়ে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৯৩৪ জন। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এদিকে, দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (৩১ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত) করোনায় আরও ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময়ে নতুন করে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ১৫৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায়ও দেশে করোনায় ৩১ জনের মৃত্যু হয়। সেদিন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১৩ হাজার ৫০১ জন। ওইদিন শনাক্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ।