বিজয়ের দিন। বাঙালির উৎসব, আনন্দ আর নিজস্ব সত্তা উপলব্ধির দিন। প্রতিবছর এ দিনটি ঘিরে আবালবৃদ্ধবনিতারা ঘর ছেড়ে পথে নামে, বিজয়ের উল্লাসে মাতে। তবে এবারের বিজয় দিবসের তাৎপর্য একটু ভিন্ন। কারণ, এ বছর মুক্তির ৫০তম বর্ষ উদযাপন করছে জাতি। দেশের মানুষের কাছে অন্য এক রঙ নিয়ে হাজির হয়েছে ৫০ বছর আগে অর্জিত বিজয়োৎসবের এ দিন। ফলে আনন্দের এ দিনে শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণের পাশাপাশি সবাই প্রিয়জনদের নিয়ে দিনভর বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরছে। উৎসবের আমেজে বিজয়ের রঙ গায়ে মাখছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বরে) সকাল থেকে রাজধানীর জাতীয় চিকিয়াখানা ও এর আশপাশের এলাকায় এমন চিত্রই দেখা যায়। হরেক রকম খাবার, খেলনা, মুখোশ, মাস্ক, এমনকি মধু- বিজয়ের এই দিনে কী নেই চিড়িয়াখানা সংলগ্ন ফুটপাতে। সকাল থেকে দর্শনার্থীর ঢল নেমেছে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায়। আর তাতেই জমে উঠেছে অস্থায়ী হকারদের বেচাকেনা। বিক্রি ভালো হওয়ায় খুশি হকাররা। তাদের আনাগোনায় ফুটপাত দিয়ে দর্শনার্থীদের চলাচলই যেন দায় হয়ে পড়েছে। ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে দর্শনার্থীদের অনেকে মূল সড়ক দিয়ে হাঁটছেন। তবে সড়কে আজ অন্যান্য দিনের চেয়ে যানবাহনের চাপ তুলনামূলক কম।
চিড়িয়াখানার সামনে কথা হয় খুদে মাস্ক বিক্রেতা আনিফের সঙ্গে। সে জানায়, এক হাজার টাকার মাস্ক এনেছেন। এর মধ্যে প্রায় ৮০০ টাকার মাস্ক বিক্রি হয়ে গেছে। আরেক মাস্ক বিক্রেতা রোহান দুপুর পর্যন্ত ৪৫০ টাকার মাস্ক বিক্রি করেছেন।
মুখোশ বিক্রেতা আশরাফ বলেন, আজকে বিক্রি ভালো। হাজার টাকার মুখোশ বিক্রি করেছি। বিকেলে বিক্রি আরও বাড়বে। প্রাণীর মুখাবয়ব ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মুখোশ প্রতি পিস ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য সময়ের তুলনায় আজ বিক্রি দ্বিগুণ।
চিড়িয়াখানার গেটের পাশে পতাকা, রিস্ট ব্যান্ড বিক্রি করছেন আবদুল মান্নান। মৌসুমী এই ব্যবসায়ী বলেন, ওয়াশে কাজ করি। ছুটির দিনে ব্যবসা করতে এলাম। বেচাকেনা ভালোই।
চিড়িয়াখানায় বাইরের থেকে খাবার বহন ও পশুপাখিকে খাবার ছোড়া নিষিদ্ধ হলেও ফুটপাত থেকে দর্শনার্থীরা দেদারসে খাবার কিনছেন। এমনকি বানর, পাখির জন্য বাদাম বুট কিনতে দেখা গেছে অনেককে। জুরাইন থেকে পরিবারের চার সদস্য নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী তলিমুল। চিপস, কেক কেনার পাশাপাশি ২০ টাকা দিয়ে ১০০ গ্রাম বাদামও কিনেছেন তিনি।
কথা হলে তিনি বলেন, ভেতরে খাবারের দাম বেশি। বাচ্চারা চিপস খেতে পছন্দ করে, তাই বাইরে থেকে কিনে নিলাম। আর বাদাম নিয়েছি চিড়িয়াখানার প্রাণীদের জন্য।
তবে চিড়িয়াখানার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাইরে থেকে কাউকে খাবার নিতে দেওয়া হচ্ছে না। সবকিছুই মনিটরিং হচ্ছে। যদিও চিড়িয়াখানার ভেতরে অনেককেই অবাধে খাবার নিয়ে ঢুকতে দেখা গেছে।
বিশেষ দিনের দর্শনার্থীদের চাপ ও ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. আব্দুল লতিফ বলেন, এক কথায় মানুষের ঢল নেমেছে। বিজয়ের দিনে সবাই খুব আনন্দঘন সময় কাটাচ্ছে। দিন শেষে দর্শনার্থী সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়াবে।
বাইরে থেকে কেনা খাবার নিয়ে প্রবেশ ঠেকাতে মূল ফটকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।