ডায়াবেটিসের সমস্যায় বিশ্বব্যাপী ৪২২ মিলিয়ন মানুষ ভুগছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় দেড় মিলিয়নেরও বেশি ডায়াবেটিস রোগী মারা যাচ্ছেন প্রতিবছর।
দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষা অনুসারে, ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় ৯৮ মিলিয়ন ভারতীয়রা ডায়াবেটিসে ভুগবে।
রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে রোগী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী ও অপরিবর্তনীয় অবস্থা। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনলে তা প্রতিরোধযোগ্য।
ডায়েট ও লাইফস্টাইলে কিছুটা পরিবর্তন আনলেই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। বিশেষ করে শীতে ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক।
যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাই শীতে বিভিন্ন সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ফলে এ সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। জেনে নিন তেমনই ৯ খাবার, যা শীতকালে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
>> মেথি বীজ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এতে থাকা বিশেষ এক অ্যামিনো অ্যাসিড ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে। এতে অ্যান্টি-ডায়াবেটিক গুণ আছে।
মেথিকে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত উপকারী বলা হয়। তাই শীতে অবশ্যই খাদ্যতালিকায় মেথি রাখুন। মেথি ভেজানো পানি ও মেথি চা নিয়মিত খেতে পারেন।
>> একাধিক পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ গাজর হলো শীতকালীন সবজি। এতে কম গ্লাইসেমিক সূচক আছে। একই সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট কম থাকায় রক্তে চিনির নিঃসরণ ধীর করে। গাজর নানাভাবে খাওয়া যায়।
>> আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন লেবুসহ সব সাইট্রাস ফলকে ‘ডায়াবেটিস সুপারফুড’ হিসাবে বিবেচনা করেছে। কম গ্লাইসেমিক সূচক থাকে সাইট্রাস ফলে। তাই নিশ্চিন্তে পরিমাণ অনুযায়ী সব ধরনের সাইট্রাস ফল খেতে পারেন শীতের মৌসুমে।
>> পেয়ারা ফাইবারসমৃদ্ধ। যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। রক্তে শর্করার বৃদ্ধি রোধ করে পেয়ারা। এতেও কম গ্লাইসেমিক সূচক আছে।
>> শীতকালীন শাক পালং। সবাই পালং শাক খেতে পছন্দ করেন। এতেও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে। ফলে হজম হতে বেশি সময় নেয় ও দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে। পালং শাকেও কম গ্লাইসেমিক সূচক আছে।
>> বিটরুটের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। বিভিন্ন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিটরুট উপকারী। বিটরুটে থাকে ফাইবার, পটাসিয়াম, আয়রন ও ম্যাঙ্গানিজের মতো ফাইবার ও খনিজ উপাদান।
>> দারুচিনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দুর্দান্ত কাজ করে, এমনই তথ্য মিলেছে গবেষণায়। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস (যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়) কমায়।
ডিকে পাবলিশিং হাউসের ‘হিলিং ফুডস’ বই অনুসারে, ‘দারুচিনি হজমে সহায়ক, যা রক্তে গ্লুকোজ ও ট্রাইগ্লিসারাইড (এক ধরনের চর্বি) উভয়ের মাত্রা স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
>> মিষ্টি আলুতেও কম জিআই থাকে। এতে প্রচুর ফাইবার থাকায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই শীতে আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন পুষ্টিকর এই খাবার।
>> বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে, লবঙ্গ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও ইনসুলিন উৎপাদনে সহায়তা করে। জার্নাল ন্যাচারাল মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় জেনেটিকালি ডায়াবেটিক ইঁদুরের উপর লবঙ্গের হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়।
গবেষণায় জানা যায়, লবঙ্গের নির্যাস ইনসুলিনের নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে। আপনার সকালের চায়ের কাপে লবঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এতে শরীরও গরম থাকবে আবার ডায়াবেটিসও থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
সূত্র: এনডিটিভি