মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিকর্মী নিয়োগে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করতে সম্মত হয়েছে দেশটির সরকার। আর এ চুক্তি সই করার জন্য বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে মালয়েশিয়া। এক চিঠিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে চলতি মাসের ১৬ অথবা ১৭ ডিসেম্বের সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য চিঠি পাঠিয়ে আমন্ত্রণ জানান এম সারাভানান। এদিন সকালে বাংলাদেশিকর্মী নিয়োগে সমঝোতা স্মারক সই করার অনুমোদন দেয় দেশটির মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন, ‘১৫ নভেম্বর আমার আগের চিঠি অনুসারে, আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে ১০ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা বাংলাদেশিকর্মীদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের অনুমোদন দিয়েছে, যা মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সই হবে। এ জন্য আগামী ১৬ অথবা ১৭ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় আসার জন্য আপনাকে (প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ) আমন্ত্রণ জানাতে পেরে সম্মান বোধ করছি। এ বিষয়ে আপনার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। মালয়েশিয়া আপনাকে এবং আপনার প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষা করছে।’
এ বিষয়ে শনিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় ও কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মধ্যেও এ বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। আগামী ১৬ অথবা ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সই করার জন্য মালয়েশিয়ার আগ্রহ বেশি। কারণ, এরপরে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বেশকিছু দিন মালয়েশিয়ায় থাকবেন না। আবার বাংলাদেশে ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণায়ের ব্যস্ততা রয়েছে।
অন্যদিকে, চলতি ডিসেম্বরেই সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে বার বার ঘোষণা দিয়ে আসছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। এমন পরিস্থিতিতে সমঝোতা স্মারক সই করার বিষয়টি ভার্চুয়ালি বা প্রতিনিধির মাধ্যমে করা যায় কিনা, তা নিয়েও আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, আগের চেয়ে এবারের সমঝোতা স্মারকে কিছু বিষয় পরিবর্তন আসছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ১. জিটুজি প্লাস পদ্ধতি উল্লেখ থাকছে না। ২. যুক্ত হচ্ছে মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সি। ৩. কর্মীদের বাধ্যতামূলক বিমা থাকছে। ৪.কর্মীদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা ও খরচ বহন করবে নিয়োগদাতা। ৫. চুক্তি মেয়াদে কর্মীদের দায়িত্ব নিতে হবে মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সিকেও। ৬. বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত। তবে কর্মীদের মালয়েশিয়া যেতে অভিবাসন ব্যয় বা খরচ কত হবে, তা জানা যাবে সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর।
২০১৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর বন্ধ হওয়ার পর মালয়েশিয়া শ্রমবাজার চালু করতে দু’দেশের মন্ত্রীদের দৌঁড়ঝাপ, দফায় দফায় বৈঠক ও চিঠি চালাচালি চলেছে তিন বছরেরও বেশি সময়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যৌথ ওয়াকিং গ্রুপের বৈঠকে রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা ইস্যুতে ঝুলে যায় শ্রমবাজার খোলার বিষয়টি। সেইসঙ্গে ২০১৬ সালে সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের মেয়াদও শেষ হয় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি। এরপর সামনে চলে আসে নতুন সমঝোতা স্মারক সই করার ইস্যুটি।