বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার কোনো সুযোগ আইনে আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।

রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউশনে রোববার (৫ ডিসেম্বর) বিচারপতিদের এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার বিষয়ে এর আগের আবেদন দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হওয়া সত্ত্বেও এখন আবেদনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে না, এর কারণ জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রথম কথা আমি যেটা বলবো, আপনারা যেটা বলছেন যে পড়ে রয়েছে, আসলে এটা পড়ে থাকেনি। কথাটা হচ্ছে, এর আগের দু’বার আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়েছিল এবং আইনিভাবেই করা হয়েছিল। এখন অনেক পক্ষ থেকেই আবেদন এসেছে। আইনের কোনো ফাঁক, উপায় আছে কি না? সার্বিক দিক বিবেচনার পরই মনে হয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসা উচিত।

আইনমন্ত্রী বলেন, সেক্ষেত্রে আপনারা দেখেছেন, সবসময় প্রধানমন্ত্রী মানবিক দিক দেখেছেন। আমাদের কথা হচ্ছে, আইনের কোনো ব্যত্যয় যেন না হয়। এবার যখন অনেক আবেদন এসেছে, আইনজীবীদের থেকেও আবেদনে এসেছে, সেজন্য সবকিছু ভেবে কিছু করা যায় কি না, এটার একটা সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত আসা আমার মনে হয় সমীচীন। সেজন্য আমরা একটু সময় নিয়েছি।

গত ১২ নভেম্বর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত এপ্রিলে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। নানা শারীরিক জটিলতায় ২৭ এপ্রিল তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৫৩ দিন চিকিৎসাধীন থেকে গত ১৯ জুন বাসায় ফেরেন তিনি।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত তিন দফায় বেগম জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

বিএনপির নেতারা খালেদা জিয়ার শর্তসাপেক্ষে এ মুক্তিকে ‘গৃহবন্দিত্ব’ বলে দাবি করছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করা হলেও সরকার তা নাকচ করে দিচ্ছে। তাকে দেশে থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে বলেও শর্ত দেওয়া হয়।

এরইমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে আবারও তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ আবেদন করেন। পরে তা আইন মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠানো হয়।

প্রসঙ্গত, দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দি ছিলেন। নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত রয়েছে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর তাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ৩০ অক্টোবর এ মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।

ওই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের দণ্ডাদেশ দেন বিচারক।

গত বছরের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে সরকার শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তি দেয়। প্রথম দফা মুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে এলে গত বছরের ২৫ আগস্ট বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে স্থায়ী মুক্তি চেয়ে আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দ্বিতীয় দফায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাসের জন্য তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায়। সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ থেকে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়।

এ মেয়াদও শেষ হয়ে এলে গত সেপ্টেম্বরে শামীম ইস্কান্দার খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসার আবেদন করেন। কিন্তু সরকার সে আবেদনে সাড়া দেয়নি। বিদেশে যাওয়া যাবে না এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে- আগের এ দুই শর্ত বহাল রেখে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে বেগম জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ায় সরকার।