দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বৈঠকের পর বুধবার (১ ডিসেম্বর) শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের উল্লম্ফন হলেও বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) লেনদেনের শুরুতে বড় দরপতন দেখা দিয়েছে।

বৈঠকের বিষয় নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়। তার জেরেই বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই সূচকের বড় পতন হয়।

কয়েক মাস ধরেই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির মধ্যে মতোবিরোধ চলছে। তবে সম্প্রতি এ দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যকার বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে টানা আট কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হয়।

এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বৈঠকে বসে এ দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বৈঠক শেষে বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসু‌দ্দিন আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের অদাবিকৃত ডিভিডেন্ড নি‌য়ে গঠিত স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ব্যাপারে একমত বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বিষয়‌টি নিয়ে কিছু আইনগত অস্পষ্টতা রয়েছে।

তিনি বলেন, স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের নিয়ে কিছু আইনগত অস্পষ্টতা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিএসই‌সি-বাংলাদেশ ব্যাংক উভয়পক্ষ এ বিষ‌য়ে আন্তরিক। আমা‌দের কা‌রো সঙ্গে কারো কোনো মতবিরোধ নেই।

বিএসইসির এ কমিশনার বলেন, বৈঠকে আমার মনে হয়েছে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক খুবই আন্তরিক। যে কারণে তারা বন্ডে বিনিয়োগকে বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখার অঙ্গীকার করেছেন। এছাড়া বিনিয়োগসীমা গণনায় বাজার দরের পরিবর্তে কস্ট প্রাইসকে বিবেচনায় নেওয়ার যে দীর্ঘদিনের চাহিদা রয়েছে, সেটাও তারা সমাধান করবে। এ জন্য যা করণীয় তারা তাই করবেন।

সাধারণ বি‌নি‌য়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা বাজার নি‌য়ে হতাশ হবেন না। বাজার ভালো করার জন্য আমা‌দের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা উভয় রেগুলেটরি বডি ভালো বাজারের জন্য যা যা করা দরকার তা ক‌রে যা‌বো।

বিএসইসির পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য আসার পর বুধবার শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক একদিনে বেড়ে যায় ১৪৩ পয়েন্ট। তবে সন্ধ্যার দিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, শেয়ারবাজারে তফসিলি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এতে আরও বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১৯৯৩-এ শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের বিষয়ে বিদ্যমান কতিপয় আইনি সীমাবদ্ধতার বিষয়ে বিএসইসির প্রতিনিধিদলকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সভার পরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিনিধির বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ওই সভার কতিপয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে, তা সঠিক নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে বিএসইসির সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত এ সভা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএসইসির উদ্যোগে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠনের ফলে তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন এবং পুঞ্জিভূত লোকসান বিদ্যমান থাকলেও সংশ্নিষ্ট বছরের মুনাফা হতে নগদ লভ্যাংশ বিতরণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এছাড়া সভায় ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৩৫(১)(গ) ধারা ও ২২ ধারা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ এর ১০ ধারার বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অদাবিকৃত তহবিল স্থানান্তর এবং পুঞ্জিভূত লোকসান থাকা সত্ত্বেও নগদ লভ্যাংশ দেওয়া আইনসম্মত নয় বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএসইসির নির্দেশনায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক- বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এমন প্রেস বিজ্ঞপ্তি আসার পর শেয়ারবাজর সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এতে বিনিয়োগকারীদের এক ধরনের আতঙ্কের চিত্র ওঠে আসে। আর বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরু হতেই বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ডিএসইতে লেনদেন শুরু হতেই প্রধান মূল্যসূচক ৮৬ পয়েন্ট পড়ে যায়। তবে এরপর কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় সূচকের পতনের মাত্রা কমে।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সকাল ১১টা ২২ মিনিটে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের তুলনায় ২৮ পয়েন্টে কমেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৯ পয়েন্ট। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ৩ পয়েন্ট কমেছে।

এ সময় পর্যন্ত ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১০১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২১০টির। আর ৪৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩৫৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৮ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৩১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৩১টির, কমেছে ৮২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির।