পাটের হারানো সেই গৌরব ফিরিয়ে আনতে গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। তবে এ নিয়ে একটি প্রকল্পে বিরাজ করছে ধীর গতি। তিন বছরে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এখন যাচ্ছে ১৩ বছরে। এছাড়া অতিরিক্ত ব্যয় যাচ্ছে ৬৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনীর জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। সেটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। ‘পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা’ শীর্ষক প্রকল্পে ঘটেছে এমন ঘটনা। এটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই)।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশি পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্প্রসারণ এবং জিনগুলো শনাক্তকরণ করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন পরিবেশে পাট পচানোর সঙ্গে জড়িত অনুজীবগুলোর জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্নকরণ করা হবে। সেই সঙ্গে বিজেআরআইর জিন ব্যাংকে সংরক্ষিত পাটের জার্মপ্লাজম থেকে প্রয়োজনীয় জিন শনাক্তকরণ ও তার প্রয়োগ করা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, মূল প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার সময় সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে সমাপ্ত হয় সমজাতীয় এবং গবেষণাধর্মী একটি প্রকল্প। সেটির সমাপ্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে এ প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি বিশেষ প্রকল্প হওয়ায় স্বাভাবিক প্রকল্প তৈরির কোনো নিয়ম প্রযোজ্য হয়নি। জিন বিজ্ঞানী অধ্যাপক মাকসুদুল আলমকে এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ২০১৪ সালে মৃত্যুবরণ করায় এর কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে।

জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) ড. মো. আবদুর রৌফ যুগান্তরকে বলেন, বিজেআরসি একটি কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এখানে কেউ ইচ্ছে করলেই ঢুকতে পারেন না। পাটের উন্নয়নে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল। এখন প্রকল্পটিকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যতদিন সেই প্রক্রিয়া শেষ না হয় ততদিন প্রকল্প হিসাবেই চলবে। এজন্য সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সাবেক সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, শুধু এ প্রকল্পটিই নয় যে কোনো প্রকল্পই সময়মতো বাস্তবায়ন জরুরি। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। প্রায় চার ভাগের তিন ভাগ প্রকল্প সময়মতো শেষ হয় না। এর পেছনে অনেক সময় যৌক্তিক কারণ থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তদারকির অভাব থাকে। তবে যাই হোক, প্রকল্পের বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময় না হলে একদিকে যেমন অর্থের অপচয় ঘটে, অন্যদিকে যথাসময়ে সেবাপ্রাপ্তি বঞ্চিত হয় দেশ ও জাতি।

সূত্র জানায়, মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩ সালের আগস্টে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ৩ বছর বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। পরে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতেও শেষ হয়নি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। অবশেষে তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ২ বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ করা হয়। এখন প্রস্তাবিত তৃতীয় সংশোধিত প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।

প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, প্রকল্পটির আওতায় গবেষণা সরঞ্জামসহ অবকাঠামো নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে। এরমধ্যে জিনোম গবেষণায় অর্জিত ফলের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের জন্য ২৪৫টি আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬৫টি আবেদন নেওয়া হয়েছে এবং অবশিষ্টগুলোর প্রসিকিউশন চলমান আছে। এছাড়া পাটের জাত উন্নয়নবিষয়ক বেশ কয়েকটি গবেষণা চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সৃষ্ট অবকাঠামোসহ গবেষণা কার্যক্রম টেকসইকরণের জন্য বিজেআরআইএ একটি উইং সৃষ্টির প্রশাসনিক কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। উইং সৃষ্টির মাধ্যমে এসব কার্যক্রম রাজস্ব বাজেটভুক্ত হওয়া পর্যন্ত গবেষণা কার্যক্রম চলমান রাখার জন্যই প্রকল্পটি ২ বছর বৃদ্ধিসহ তৃতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।