মাদক-অ্যালকোহল শরীরের জন্য ক্ষতিকারক জেনেও অনেকেই নিয়মিত সেবন করে যাচ্ছেন। এখনকার শহুরে জীবনে পার্টিগুলোতে খাবার খাওয়ার পর অ্যালকোহল গ্রহণ অনেকটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অভিজাত পরিবারে মদ্যপান স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
অ্যালকোহল সেবনে কেউ সাময়িকভাবে কিছুটা আরাম অনুভব করতে পারে; কিন্তু বেশি অ্যালকোহল সেবনে রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে হার্টঅ্যাটাক এবং স্ট্রোক হতে পারে।
রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পেলে প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ হতে পারে।
নিয়মিত এলকোহল নিলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনে শরীরের জন্য মারাত্মক আরও যেসব ঝুঁকি তৈরি হতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ফারুক হোসেন।
আমাদের শরীর এলকোহল পানীয়কে এসিটাইলডিহাইডে রূপান্তরিত করে। এসিটাইল ডিহাইড একটি কারসিনোজেন অর্থাৎ ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান।
অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যারা নিয়মিত মদ্যপান বা অ্যালকোহল সেবন করে থাকেন, তাদের যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, এইচআইভি বা এইডস, যৌনবাহিত রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। কারণ অতিরিক্ত মদ্যপানকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণে নিজেদের সম্পৃক্ত করে থাকে। ফলে তারা অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে।
দীর্ঘমেয়াদে অ্যালকোহল সেবনের ফলে মস্তিস্ক, যকৃত ও হার্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিরোসিস, অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস, ফাইব্রোসিস, উচ্চ রক্তচাপ, কার্ডিওমায়োপ্যাথি, এরিথমিয়া, স্ট্রোক, প্যানক্রিয়েটাইটিসের মতো প্রাণঘাতি রোগ দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে অ্যালকোহল সেবনের ফলে মুখ, গলা, ব্রেস্ট এবং লিভারের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল সেবনে ডিমেনসিয়া হতে পারে। বিয়ার, ওয়াইন, এলকোহল যেকোনো রূপে সেবন করলে বেশি প্রস্রাব করতে হয়। এলকোহল মুখকে শুষ্ক করে এবং ডিহাইড্রেশন করে থাকে। এ অবস্থায় ব্যাকটেরিয়া মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে থাকে।
অ্যালকোহল সেবনে বছরে ২.৮ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। গবেষকরা বলেন, অ্যালকোহল সেবনের কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। সামান্য অ্যালকোহল সেবনেও অনেক ক্ষতি হতে পারে। তাই এটি মনে করার কোনো কারণ নেই যে অল্প একটু খেলে কোনো সমস্যা হবে না।
অ্যালকোহল সেবনকালে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা ঠিক নয়। বিশেষ করে এনএসএআইডি গোত্রভুক্ত ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করলে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।