দুপুরের রোদে এখনো তীব্রতা থাকলেও রাতের বাতাসে শীতলতা আভাস দিচ্ছে আগাম শীতের। বাতাসেও তাই যেন শীতের ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে সুয্যি মামার বিদায় লগ্নে। আর কিছু দিন পরই প্রকৃতিতে আগমন ঘটবে শীতের। তবে প্রাণহীন চিরচেনা এ শীত কেবল ধরণির বুকেই না আমাদের ত্বকের মাঝেও সমানভাবে তার ছাপ ফেলে। তাই তো শীতের বাতাস বইতে শুরু করলেই ঠোঁট ফাটা কিংবা ত্বকের রুক্ষতা চোখে ধরা দেয় সবার আগে। ত্বক যেন হারিয়ে ফেলে তার সেই আগের লাবণ্যময়তা। তাই শীতের আগেভাগেই চাই ত্বক এবং চুলের সঠিক যত্ন। কীভাবে ঘরে বসে খুব সহজে হাতের কাছের টুকিটাকি উপাদান দিয়ে নিতে পারবেন নিজের যত্ন তাই জানিয়েছেন হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন অ্যান্ড কেয়ারের স্বত্বাধিকারী শাহীনা আফরিন মৌসুমী।

শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় আমাদের প্রতিদিনের লাইফস্টাইল। তাই হাত, পা’র সঙ্গে ত্বক এবং চুলের যত্ন আবশ্যক। আর ত্বকের যত্নে এ সময়ে হাতের কাছে থাকা সবচেয়ে উপকারী একটি উপকরণ হচ্ছে মধু। মধু যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তেমনি ত্বকের ক্ষেত্রেও ভিষণ কার্যকরী। তবে মধু ব্যবহারের সময় ত্বকের ধরনের দিকে খেয়াল রাখা আবশ্যক। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে মধু যেমন খুব সহজেই ব্যবহার করা যায় ঠিক তেমনি মিশ্র ত্বকের ক্ষেত্রে মধু ব্যবহারে থাকতে হবে সতর্ক। কারণ যে কোনো ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রেই সরাসরি মধু ব্যবহার না করাই ভালো। এ ক্ষেত্রে যাদের শুষ্ক ত্বক তারা ডিমের কুসুমের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা মধু, সঙ্গে গমের ময়দা এবং কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে তা হাতে, মুখ, পায়ে প্যাক হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন। মিশ্রণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে দশ থেকে পনেরো মিনিট ত্বকে রেখে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই আপনি পাবেন উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত সেই আগের ত্বক। প্যাক ব্যবহারের পরে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এতে ত্বক আরও বেশি সুরক্ষিত থাকবে শীত থেকে।

অন্যদিকে যাদের তৈলাক্ত কিংবা মিশ্র ত্বক তাদের ক্ষেত্রে আধা চা চামচ মধুর সঙ্গে দুই চা চামচ গোলাপজল আর মুগ ডালের বেসন মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে তা স্কিনে অ্যাপ্লাই করলে খুব দ্রুত ত্বকের সুরক্ষায় কাজ করবে। এ ছাড়া যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা এক চা চামচ তুলসী পাতার রসের সঙ্গে হাফ চা চামচ মধু আর চালের গুঁড়া মিশিয়ে হাতে মুখে পায়ে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে মধু ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে তা খাঁটি মধু হয়। এর বাইরে অনেকেই আছেন যারা শুধু মধু ত্বকে ব্যবহার করতে চান। এ ক্ষেত্রে মধুর সঙ্গে গোলাপজল ব্যবহার করতে হবে। এক চা চামচ মধুর সঙ্গে দুই চা চামচ গোলাপজলের মিশ্রণ তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করতে হবে এবং ১০ মিনিট রেখে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

ত্বকের পাশাপাশি রুক্ষতার ছোঁয়া ধরা পড়ে চুলেও। তাই চুলের যত্নে এই সময়ে তেলের বিকল্প নেই। তবে চুলে তেল ব্যবহারের আগে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে চুল পরিষ্কার আছে কিনা। তাই শ্যাম্পু করে নেওয়াই ভালো আগেভাগে। গোসলের ১০ মিনিট আগে ওয়েল ম্যাসাজ করে মাথায় শ্যাম্পু করে নিলে শীত ঋতুর পুরো সময় আপনি পাবেন ঝলমলে চুল। অনেকেই তেল পেঁয়াজ কিংবা আদার সঙ্গে গরম করে স্কাল্পে অ্যাপ্লাই করেন। এতে তেল সঙ্গে মিশ্রণের অন্য উপাদানের গুণাবলি আর আগের মতো কাজ করে না। তাই কোনো উপাদান ব্যবহারের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ব্যবহার করাই ভালো চুলের যত্নের ক্ষেত্রে।

আর এভাবেই শীতের আগাম সময় থেকেই আপনি আপনার ত্বক এবং চুল রাখতে পারবেন সুস্থ এবং উজ্জ্বল বছরের অন্যান্য সময়ের মতোই।